পাহাড়ে কফি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেন ঙুইইন ম্রো
পাহাড়ে ফলদ বাগানের পাশাপাশি কফির আবাদ করেছিলেন বান্দরবান চিম্বুক এলাকার বাসিন্দা ঙুইইন ম্রো। ভালো ফলন ও বাজারদর ভালো পাওয়ায় কফি চাষেই ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বিশ্বে নানা প্রজাতির কফি পাওয়া গেলেও বান্দরবানে অ্যারাবিকা, রোবাস্তার পাশাপাশি চাষ হচ্ছে চন্দ্রগিরি। অ্যারাবিকা ও রোবাস্তার চেয়ে উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় চন্দ্রগিরি কফি চাষে ঝুঁকছেন অনেক চাষি।
সরেজমিনে জানা যায়, চিম্বুক পাহাড়ের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের বাবুপাড়া এলাকার পাহাড়ে ১০ একর জমিজুড়ে আম, জাম্বুরা, ড্রাগন, লিচুর পাশাপাশি চাষ করেছেন কফি। কফি গাছগুলোতে ঝুলছে লাল-সবুজের কাঁচা-পাকা কফি চেরি।
চাষি ঙুইইন ম্রো জানান, ২০১৫ সালে এক আত্মীয়ের পরামর্শে ১ হাজার চন্দ্রগিরি কফি গাছের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার কফি গাছ আছে। যার মধ্যে ১ হাজার গাছ থেকে বছরে প্রায় দেড় টন চেরি পাওয়া যায়। চেরি হিসেবে যার বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সব গাছে একই সঙ্গে ফলন পাওয়া গেলে বছরে অন্তত ১০ টন কফি চেরি উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা হবে।
তিনি জানান, তার কফি গাছ লাগানোর ৩ বছর থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। এ জাতের গাছে রোগবালাই কম। তেমন পরিচর্যা করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও ভালো হয়। তার বাগানের ৮০০ আম, ৪০০ ড্রাগন, ১০০ জাম্বুরা গাছ থেকে বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পান। সেখানে কফি গাছগুলোর একাংশ থেকে পাওয়া চেরি থেকেই ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
কফি চাষ বিশেষজ্ঞ তৈদু রাম ত্রিপুরা জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে কফি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের দেশেও বেড়েছে কফির চাহিদা। উৎপাদিত কফি বিক্রিতে সিন্ডিকেট না থাকায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পেয়ে থাকেন। দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ইথিওপিয়া-ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও কফি আমদানি করা হয়।
তিনি জানান, কফি বেচাকেনা করা প্রতিষ্ঠান নর্দান অ্যান্ড কফি রোস্ট কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় কফি চাষিদের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় বান্দরবানে উৎপাদিত পাকা কফি ফল খোসাসহ প্রতি কেজি ১৭০ টাকা বিক্রি করতে পারছেন। জেলার চিম্বুক, রোয়াংছড়ি, রুমা ও লামা এলাকায় চন্দ্রগিরি কফির চাষ হচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ নেওয়াজ জানান, ২০২০-২১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তাদের সহায়তায় জেলাজুড়ে ২৫০ একর জমিতে অ্যারাবিকা ও রোবাস্তা জাতের কফি চাষ শুরু হয়। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে সাড়ে ৭ হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে তাদের পরামর্শে ১ হাজার ৮৫০ একর জমিতে দুই জাতের কফি চাষ হচ্ছে। যা থেকে একর প্রতি ৭০০ কেজি শুকনো কফির বিন পাওয়া যাচ্ছে।
এসইউ/জেআইএম