পতিত জমিতে বাড়তি আয়
নীলফামারীতে ৩ লক্ষাধিক বস্তায় আদা চাষ
নীলফামারীতে কম খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। এতে জেলার সব উপজেলায় কম-বেশি বস্তায় আদা চাষের আগ্রহ বাড়ছে। জেলায় প্রায় ৩ লক্ষাধিক বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে বস্তায় আদা চাষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার কৃষকদের মাঝে বাড়তি আয়ের জোগানে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে বস্তায় আদা চাষ। বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। ৫০-৬০ টাকা খরচ করে প্রতি বস্তা থেকে প্রায় ১-২ কেজি আদা পাওয়া যাবে। জেলায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৫ বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে। আদা চাষ বেশি হলে আমদানি করা আদার চাহিদা অনেকটাই কমে আসবে বলে দাবি সচেতনমহলের।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৫ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ১ লাখ ৫ হাজার, ডোমারে ৬৫ হাজার, ডিমলায় ৬০ হাজার, কিশোরগঞ্জে ৫৮ হাজার ৪০০, জলঢাকায় ২৬ হাজার ও সৈয়দপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ১৫০ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। সফলতা পেলে ভবিষ্যতে এভাবে আদার চাষের পরিধি বাড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সদরের রামনগর এলাকার মান্না মিয়া বলেন, ‘আমি আগে কখনো বস্তায় আদা চাষ করিনি। এবার ৯ হাজার বস্তায় চাষ করছি। বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় চাষ করলেও তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি।’
পলাশবাড়ী হরতকীতলার বাসিন্দা মো. মোজাম হোসেন জানান, তিনি গালামালের ব্যবসা করেন। এর পাশাপাশি বাড়ির পাশে পতিত জমিতে ১০০ বস্তায় এই প্রথম আদা চাষ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে নিয়মিত আদা গাছ পরিচর্যা করে আসছেন। তার আশা এতে তিনি লাভবান হবেন।
সদরের আদা চাষি নুরুজ্জমান বলেন, ‘অনলাইনে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে পুকুর পাড়ের চারপাশে ২ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। বর্তমানে আদার ক্ষেতের যে অবস্থা; তাতে আর্থিকভাবে লাভবান হবো।’
নিতাই ইউনিয়নের রোকন ইবনে আজিজ ২৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। সিঙ্গেরগাড়ি পারেরহাট এলাকার কৃষক ফারুক মণ্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসারের সহায়তায় ৪৭০০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। ২০০ বস্তা নষ্ট হওয়ার পরও আশা করছি ৭-৮ লাখ টাকা লাভ হবে।’
- আরও পড়ুন
টাঙ্গাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি পাট চাষ
নড়াইলে এবারও অসময়ে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন
মাগুরা ইউনিয়নের মিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া ২০ শতাংশ পতিত জমিতে দেশি জাতের ১০৩০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এখন আদার কেজি ৩০০ টাকা। উত্তোলনের সময় ২০০ টাকা কেজি বাজার পেলে ২ লাখ টাকার উপরে লাভ হবে। ব্যয়ের তুলনায় লাভ বেশি হবে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের কৃষক আ. কাদের বাড়ির উঠানের আশেপাশে ৩০ শতাংশ পতিত জমিতে ৬৭৩৫টি বস্তায় আদা চাষ করে পুরো উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আহকাম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমি ও শ্রমের প্রয়োজন হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাইসহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে কৃষকেরা পতিত জমি কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদা চাষ করছেন। সার-গোবর ছাড়া একটু খেয়াল ও মাঝে মাঝে পানি দিলেই আদা গাছ টিকে যাবে। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সদর উপজেলায় ১ লাখ ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করছেন। এবার কৃষি বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে ১৫ হাজার বস্তা সার ও কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের নতুন এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির আশপাশের ছায়াযুক্ত জায়গা, বাগান, পতিত স্থানে সহজেই এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়।’
কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষিবিদ লোকমান আলম বলেন, ‘উপজেলায় আদার এক প্রকার (রাইজোম রট) রোগ ছিল। এ জন্য কিছু আদা চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি লাভজনক। চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ৫৮ হাজার ৪০০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে লাভ হবে।’
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৫ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। জেলার সবগুলো উপজেলায় বর্তমানে কম-বেশি বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। কম খরচে আদা চাষের আগ্রহ ও পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিপণন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে আসছে। বসতবাড়ি ও অন্য ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ। কম খরচে উৎপাদন হওয়ায় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে বিপণন করা সম্ভব বলে আশা করছি।’
ইব্রাহিম সুজন/এসইউ/জেআইএম