১২ লাখ টাকা বিক্রির আশা
মিরসরাইয়ে মিশ্র ফলের বাগানে সফল ৩ বন্ধু
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন নাশিদ, মিশেল ও ইমন। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে তারা সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামে তাদের এই মিশ্র ফলের বাগান দেখতে প্রতিদিন লোকজন ছুটে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির পেছনে না ঘুরে প্রথমে ৩ একর জায়গায় করেছেন পেয়ারা বাগান। এরপর ২ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে মাল্টা বাগান। ১ একর জায়গায় কমলা বাগান ও ১০ শতক জায়গায় ড্রাগন বাগান। এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। এক সপ্তাহ ধরে ওই বাগানের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন বাগানে এসে পেয়ারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার ও স্থানীয়রা। অনাবাদি জমিতে গড়ে তোলা পেয়ারা বাগানটির নাম দেওয়া হয়েছে আমিগো এগ্রো।
সরেজমিনে জানা যায়, বিশাল জায়গাজুড়ে পেয়ারা গাছে থোকায় থোকায় পেয়ারা ঝুলছে। প্রতিটি পেয়ারা পলিথিন ব্যাগে প্যাকেট করা। বাগান পরিচর্যা করছেন নাশিদ ও মেহেদী হাসান। পেয়ারা গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাল্টা ও কমলা গাছ। পেয়ারা প্যাকেট করায় পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এতে ফলের রং সুন্দর থাকে। কীটনাশকমুক্ত ফল উৎপাদনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কয়েকজন বেকার যুবকের।
নজরুল ইসলাম নাশিদ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পাপুয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। চট্টগ্রাম শহরে তার বেড়ে ওঠা। চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম নাশিদ বলেন, ‘আমার স্পেন প্রবাসী ভগ্নিপতি আবু নাছের তার বন্ধুর কাছ থেকে ৫ একর জায়গা কেনেন। প্রথমে এ জায়গায় তিন বন্ধু মিলে কয়েকটি সেড করে পোল্ট্রি খামার করি। কয়েক বছর লোকসান হওয়ার পর পেয়ারা বাগান করি। করোনাকালে সুপার-১০ ও থাই গোল্ডেন-৮ জাতের ২৫০০ পেয়ারা চারা লাগাই। চারাগুলো সংগ্রহ করেছি ঝিনাইদহ থেকে। প্রতিটি চারা গড়ে ৩৫ টাকা করে কিনেছি। ২০২২ সালে প্রায় আড়াই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছি।’
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে প্রায় ৯ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়। একই বছর সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। আমাদের বাগানের পেয়ারা ও মাল্টায় কোনো মেডিসিন ব্যবহার না করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাহিদা আছে। প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকারি ৪৫ টাকা ও খুচরা ৬০ টাকা বিক্রি করছি। এ বছর অনেক বেশি ফলন হয়েছে। এবার ১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী।’
অপর বন্ধু সৈয়দ আকরাম হোসেন মিশেল বলেন, ‘পেয়ারা ছাড়া বাগানে আছে ৬০০ পিস মাল্টা বারি-১ ও দুটি জাতের ১০০ পিস কমলা গাছ। আশা করছি আগামী বছর থেকে কমলা গাছে ফলন আসবে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।’
করেরহাট গনিয়াতুল উলুম আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমি প্রায় সময় পেয়ারা বাগানে ছুটে যাই। সেখানে গেলে অনেক ভালো লাগে। ওই বাগানের পেয়ারা বাজারের পেয়ারার চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু।’
করেরহাট ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এএইচএম মোমিনুল হক বলেন, ‘থাই পেয়ারা একটি নতুন জাত। কৃষককে পেয়ারা প্যাকেটবন্দি করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হবে না বলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। সেই সঙ্গে ফলের রং আকর্ষণীয় হয়। এখানে সেটা করায় কীটনাশকমুক্ত পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া মাল্টা চাষেও সফল হয়েছে তারা।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর এলাকায় অনাবাদি জায়গায় পেয়ারা, মাল্টা ও কমলা বাগান করা উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের দেখাদেখি অনেকে পেয়ারা বাগান করতে আগ্রহী হবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
এসইউ/এএসএম