ফলন বিপর্যয়ে মলিন লিচু চাষিদের মুখ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়ীয়া লিচু বাগানগুলোয় এ বছর টানা তাপপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টিতে উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে এবার আশানুরূপ মুনাফার দেখা মিলবে না বলে শঙ্কা বাগান মালিকদের। এতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই।
মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামকে সবাই লিচুর গ্রাম হিসেবেই চেনেন। এখানকার লিচু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যায়। যারা প্রবাসী রয়েছেন, তারা এই লিচু প্রবাসেও নিয়ে যান। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লিচুপ্রেমী মানুষ মঙ্গলবাড়ীয়ায় ভিড় করেন।
জানা যায়, প্রায় দুইশ বছর আগে চীন থেকে কোনো এক ব্যক্তি প্রথমে একটি চারা গাছ এনে লাগান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌর এলাকা মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামে। বেশি ফলন ও ছোট বিচির কারণে এ লিচুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। কিছুদিনের মধ্যে এ জাতের লিচুর কলম চারা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। লাভজনক হওয়ায় দ্রুতই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে হয় গ্রামবাসী। বর্তমানে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে শোভা পাচ্ছে এ লিচুর গাছ।
পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামে ৫ হাজারের বেশি লিচু গাছ আছে। গত বছর এ এলাকা থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার তীব্র তাপপ্রবাহে ফলন বিপর্যয় হয়েছে।
মঙ্গলবাড়ীয়া কামিল মাদ্রাসার সামনে কথা হয় লিচু চাষি আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা বিক্রি হলেও এ বছর টানা তাপপ্রবাহের কারণে ফলন একেবারেই কম। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। তবে তাপপ্রবাহের শুরু থেকেই কৃষি অফিস বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছে। তারপরও ফলন ভালো হয়নি।
আরও পড়ুন
এলাকার চাষি ও সবচেয়ে বড় লিচু ব্যবসায়ী রাজিব মিয়া বলেন, ‘অন্যদের গাছে লিচু না থাকলেও সঠিক সময়ে পানি দেওয়ার কারণে আমার গাছের ফল তুলনামূলক ভালো। আমি কৃষি অফিসের পরামর্শ মতে নিয়মিতই গাছে পানি ছিটিয়েছি। তাই আমার গাছের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে।’
লিচু ক্রেতা শান্ত হুসাইন বলেন, ‘মঙ্গলবাড়ীয়ার লিচুর অনেক নামডাক শুনেছি। তাই এখান থেকে লিচু কিনতে এসেছি। এসে লিচুর দাম দেখে হতাশ। একশ লিচুর দাম ১০০০ টাকা। লিচুর মান ভালো না হলেও একশ লিচু ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।’
মঙ্গলবাড়ীয়ায় লিচু কিনতে আসা রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মঙ্গলবাড়ীয়ার লিচু নিতে অনেকেই আসেন। এ লিচুর গন্ধ ও স্বাদ অন্যরকম। তাই আমরাও গাছতলা থেকে লিচু নিতে এসেছি। এসে দেখি এবার লিচু তেমন হয়নি।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম বলেন, ‘মঙ্গলবাড়ীয়া এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৫ হাজারের ওপরে লিচু গাছ আছে। প্রতি বছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ফলন একেবারেই কম। গতবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শসহ যন্ত্রপাতি দিয়েছে। যাতে তারা গাছে পানি দিতে পারেন। তারপরও ফলন কম হয়েছে।’
এসইউ/এমএস