মরুভূমির ‘সাম্মাম’ এখন সরিষাবাড়ীতে
সুস্বাদু ফল সাম্মাম। এটি মূলত উচ্চ ফলনশীল ফল। দেখতে অনেকটা বেল কিংবা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতরে রসালো তরমুজের মতো। প্রথমবারের মতো নতুন জাতের এ ফল চাষে সাড়া ফেলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম তারেক (২২)। উৎপাদনের খবর পেয়ে দেখতে আসছেন অনেকে।
তারিকুল জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার সাতপোয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে তিনি এটি চাষাবাদে উদ্যোগী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে বেশ জনপ্রিয় ফল ‘সাম্মাম’, যা বাংলাদেশে ‘রকমেলন’ নামেও পরিচিত। মরুভূমির ফল হলেও এখন এটি দেশের মাটিতেও চাষ হচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে সাম্মাম চাষ করা হয়। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনে এ ফল সংগ্রহ করা যায়। একটি পরিপক্ব সাম্মামের ওজন প্রায় ২ থেকে আড়াই কেজি হয়ে থাকে। এ ছাড়া খুবই সামান্য পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে কম খরচে বেশি ফলন আসে। তাই তরুণ উদ্যোক্তারা দিনদিন এটি চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণের পাশাপাশি দেশের কৃষি বিভাগ এগিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, মালচিং সিটের ভেতরে চারা লাগানো হয়েছে। মাচায় গাছ তুলে দেওয়া হয়েছে। নেটে বাঁধা হয়েছে ছোট-বড় সাম্মাম। হালকা বাতাসে দুলছে সারি সারি সাম্মাম। কোনোটির ওজন ১ কেজি আবার কোনোটির ওজন ২ কেজিরও বেশি। কিছুদিন পর থেকেই এটি পাকতে শুরু করবে। এটি দেখতে ক্ষেতের পাশে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন
আব্দুল আলীম সবুজ নামে এক কৃষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবজির জন্য এলাকাটি খুবই পরিচিত। এলাকার প্রতিটি ঘর যেন একেকটি খামার। এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি সবজি আবাদ করেন না। গত বছর আমি তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছি। এবারও তরমুজ আবাদ করেছি। ভবিষ্যতে রকমেলন বা সাম্মাম চাষ করবো।’
উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম তারেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইউটিউব দেখে এটি চাষে উদ্বুদ্ধ হই। ৪ শতক জমিতে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবারে ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে। ছাত্রাবস্থায় কাজ করছি তাই স্বল্প সুদে ঋণ চাইছি। এতে ভবিষ্যতে বড় পরিসরে চাষাবাদ করতে পারবো।’
সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপ সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রকমেলনের চাষাবাদ হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা এ ফসল চাষে আগ্রহী। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পরিদর্শনের পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা শুনেছি তারিকুল নামে এক তরুণ এটি চাষাবাদ করছেন। তাকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’
মো. নাসিম উদ্দিন/এসইউ/এএসএম