নীলফামারীতে ভুট্টায় বদলেছে কৃষকের জীবন
নীলফামারী জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। এ জেলার উর্বর দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল হয়ে থাকে। তবে অন্যতম রবিশস্য ভুট্টা লাভজনক হওয়ায় অল্প পুঁজিতে কৃষকেরা ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা আবাদে। এবার বাম্পার ফলনে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৮ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছর ২৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ২ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩০ হেক্টর, ডোমার ৩৮ হেক্টর, ডিমলা ১৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জ ৩ হাজার ২০৫ হেক্টর, জলঢাকা ৩ হাজার ৬৭৮ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। জেলার অনেক কৃষক ধান, গম, সরিষা, পাট, কমলা, মাল্টা, আপেলকুল, চা, আম, লিচু, ড্রাগন, আদা চাষ করেন। এ ছাড়া ভুট্টা এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা আছে।
নীলফামারীর লক্ষীচাপ কাছারী গ্রামের কৃষক হারুন রশিদ বলেন, ‘এলাকার যেসব জমিতে আগে বোরো চাষ করা হতো; সেসব জমির অনেকগুলোতেই আমরা এবার ভুট্টা করেছি। বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। অথচ যখন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়; তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই ওঠে না। ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম, দামও তেমন বেশি থাকে। এ জন্য আমরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছি।’
কিশোরগঞ্জের নিতাই গ্রামের কৃষক মজিবর বলেন, ‘আমাদের এলাকা আলু চাষের জন্য দীর্ঘদিন থেকে বিখ্যাত। উপজেলার সিংহভাগ আলু আমাদের এলাকায় উৎপন্ন হয়ে থাকে। এবার মৌসুমে আলুর দাম ভালো থাকায় চাষিরা উপকৃত হয়েছেন। তাই ভুট্টাও চাষ করছি। আশা করি ফলনও বাম্পার হবে। তবে ন্যায্য দাম পেলে কষ্ট সার্থক হবে।’
আরও পড়ুন
ডিমলার খালিশাচাপানী এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘বোরো ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি। এ জন্য আমরা ভুট্টা চাষ করি। ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ভুট্টার ফলন আসে ৪০ থেকে ৫০ মণ। বর্তমানে ভুট্টার অবস্থা খুব ভালো, যদি ভালো দাম পাই তাহলে আশা করছি অনেক লাভবান হবো।’
পলাশবাড়ী ইউনিয়ন-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রফুল্ল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকায় কম খরচে বেশি ফলনশীল ভুট্টা উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিচ্ছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ভুট্টাকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় ভুট্টার আবাদ অনেক বেশি। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় ভুট্টা চাষ বাড়ছে। এ বছর আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে ভালো ফলন পাবেন কৃষকেরা। সার্বিক পরিস্থিতি, বাজারমূল্য ভালো থাকলে ভুট্টা চাষ দিন দিন সম্প্রসারিত হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুষ্টিসমৃদ্ধ ভুট্টা লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকেরা এটি আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ তাদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। মাঠকর্মীরা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে আছেন। ভুট্টা এখন গরু, মহিষ, ছাগল, মাছ, হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আগামীতে মানুষের খাদ্যতালিকায় যুক্ত হলে বাড়বে ভুট্টা চাষ।’
এসইউ/এমএস