মিরসরাইয়ে ২০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদনের আশা
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকেরা। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধা থাকায় এখানকার সুস্বাদু ও মিষ্টি তরমুজ চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তার কাছে। চলতি মৌসুমে ২০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী উপজেলা কৃষি বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলের পতিত জমিতে উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালু মিশ্রিত মাটি হওয়ায় ইছাখালী, সাহেরখালী ও মিঠানালা ইউনিয়নের চরাঞ্চল এলাকায় প্রায় ৫০০ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৫০ একর জমিতে। এ বছর আরও ১৫০ একর জমিতে চাষ করেছেন কৃষকেরা। তরমুজ চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন পরিধি বাড়ছে। বর্তমানে বেশিরভাগ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি তরমুজের মুকুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। রবি মৌসুমে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকলেও চলতি বছর এখানে তরমুজ চাষ করে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ৩ ইউনিয়নে চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সবুজ লতার সমারোহ। এক সময় এ ৩ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গা খালি পড়ে থাকতো। বর্তমানে ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সংগ্রহ করে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তারা তরমুজ চাষ করছেন। চাষিরা জমিতে গাছের পরিচর্যা করছেন। কেউ গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে তারাও তরমুজ চাষ করতে চান। কারণ নিজেদের জমিতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা কৃষকেরা বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
জানা গেছে, এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১০-১৫ হাজার টাকা হারে খাজনায় বর্গা নিয়ে তরমুজের বীজ বপন করেন সুবর্ণচরের কৃষি উদ্যোক্তারা। পূর্ব ইছাখালী গ্রামে দোঁআশ মাটি (বালিযুক্ত) ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় এবং ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় চলতি বছর ১৬ জন উদ্যোক্তা তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে মাটিগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করেন। পরে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নেন। স্থানীয় কৃষকদের জমি বর্গা নিয়ে চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশি ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করেন। ৫০০ একর জমিতে তাদের অধীনে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
আরও পড়ুন
কৃষকেরা জানান, সঠিক পরিচর্যা করলে তরমুজ চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। তবে তরমুজ গাছ ছত্রাকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাই সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তবে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সহায়তা না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন উদ্যোক্তারা।
তরমুজ চাষি নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘এবার ডিসেম্বরের শেষদিকে ১৬ জন মিলে ১৬৫ কানি জমিতে তরমুজের চারা রোপণ করেছি। এখন গাছে ফুল ও মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।’
হারুন অর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে কৃষি অফিসাররা আসেন না। যখন একটা ক্ষেত থেকে ফসল তোলা শেষ হয়; তখন এসে এই গাছে এই ওষুধ, ওই গাছে ওই ওষুধ দেবেন। তারা যদি ফসল লাগানোর সময় যথাযথ ওষুধ দিতে বলতেন, তাহলে ফসল আরও বাড়তো।’
ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘এ বছর সুবর্ণচর এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা তরমুজ চাষ করেছেন। গাছের বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে তরমুজ চাষ করা সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ও সাহেরখালীতে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবার ৩৮ লাখ মেট্রিক টন হিসেবে প্রায় ১৯-২০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে।’
এসইউ/জেআইএম