মাছের খামারে সফল মিরসরাইয়ের অহিদুন নবী
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের স্বপ্নবাজ তরুণ অহিদুন নবী (৩০)। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মাছের খামার। শুরুতে ধাক্কা খেলেও থেমে যাননি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবার শুরু করেন। সেখান থেকে সফলতার গল্পের শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
অহিদুন নবী এখন এলাকার বেকার তরুণদের আইডল। প্রথমে বাড়ির পাশে ১০ শতক পুকুরে শুরু করেন বায়োফ্লক উপায়ে (পরিবেশবান্ধব) মাছের পোনা উৎপাদন। এখন তার মাছ চাষের পরিধি অনেক বেড়েছে। আছে গরুর খামারও। তিনি মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ভগবতিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের ছেলে। দুই ভাই-দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
অহিদুন নবীর খামারে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরটি টিন দিয়ে চারিদিকে ঘেরা। ছোট্ট একটি পুকুরে মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। পুকুরের ওপরে নেট দেওয়া হয়েছে। অহিদুন নবী পুকুরে খাবার দিচ্ছেন। ছোট্ট এ পুকুরে একসঙ্গে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মাছের পোনা উৎপাদন করছেন।
প্রথমে বিভিন্ন কোম্পানির রেণু কিনে আনেন। এরপর তিন মাস ধরে সেগুলো বড় করেন। যখন প্রতি কেজি ৫০ পিস মাছ হয়; তখন বাইরে বিক্রি করা হয়। প্রতি ব্যাচে ১ লাখ মাছের পোনা উৎপাদন হয়। তার উৎপাদিত পোনার বেশ চাহিদা। মাছ চাষিরা বুকিং দিয়ে রাখেন। মিরসরাই ছাড়াও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, ফেনীর সোনাগাজী থেকে এসে পোনা নিয়ে যান। তার দেখাদেখি আরও ৪ জন এ পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদন করছেন।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে বাড়ছে ড্রাগনের ফুল ও ফল
অহিদুন নবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা থেকে স্নাতক (দাওরা) পাস করি। পড়াশোনা শেষ করে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা ছিল। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় সে চিন্তা বাদ দিই। চাকরি করবো না বলে মনস্থির করি। বিভিন্ন মাধ্যমে কম জায়গায় বায়োফ্লক মাছ চাষ দেখে আগ্রহী হয়ে উঠি। চট্টগ্রাম শহরে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিই।’
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে ২ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯ সালে পোনা উৎপাদন শুরু করি। প্রথমে সব মাছ মারা গিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়। তার ওপর বছর না ঘুরতেই করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়ি। ২০২০ সালের শেষের দিকে লাভের মুখ দেখে আমার খামার। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।’
সফলতা সম্পর্কে অহিদুন নবী বলেন, ‘একে একে প্রতি ব্যাচে প্রায় ১ থেকে ২ লাখ টাকা আয় হয়। এখানকার আয় দিয়ে উপজেলার মৎস্য জোন খ্যাত টেকেরহাটে ৫ একর জায়গায় মাছ চাষ শুরু করি। যৌথভাবে চাষ করি আরও প্রায় ৩০ একর। পাশাপাশি গড়ে তুলি গরুর খামার। দুটি গরু দিয়ে শুরু করে এখন ২৬টি গরু আছে। সব মিলে ব্যবসার মূলধন এখন ৪০ লাখ টাকা।’
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
অহিদুন নবী প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভিডিও দেখে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো শিখেছেন। মনোবল আর ধার-ধেনার কিছু টাকা পুঁজি করে অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তার বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ নিয়ে অন্য উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা আগ্রহ দেখান। কিন্তু স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান তিনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও দ্রুত ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন বলে আশা করেন।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ‘অহিদুন নবী নামে এক তরুণ মাছ চাষ করছেন বলে শুনেছি। আমি এখনো তার প্রকল্পে যাইনি। উপজেলা মৎস্য অফিসে এসে কেউ সহযোগিতা পাননি এ কথা ঠিক নয়। দ্রুতই আমি অহিদুন নবীর প্রকল্পে গিয়ে দেখে আসবো।’
এসইউ/জেআইএম