শীতকালীন সবজিতে ভাগ্য ফিরেছে জাজিরার চাষিদের
দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত ফসলের মাঠ। কোথাও যেন ফাঁকা নেই এক ইঞ্চি জমিও। মাঠের প্রতিটি জমিতেই এখন চাষ হচ্ছে শসা, বেগুন, করলা, লাউ, ঢ্যাঁড়শসহ শীতকালীন নানা সবজি। এমন দৃশ্য শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার ফসলি মাঠগুলোর। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন সবজি চাষে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল থেকে জাজিরা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শীতকালীন চাষ শুরু করে স্থানীয় কৃষকেরা। এ অঞ্চলের জমি শীতকালীন সবজি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় জমিতে ভালো ফলন আসতে শুরু করে। পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মালচিং পদ্ধতি, বেড পদ্ধতি, ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে এসব সবজির প্রচুর চাহিদা থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে শীতকালীন সবজি চাষ। বর্তমানে জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে শসা, করলা, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, লাউ, শিম ও লালশাক। যা থেকে শীত মৌসুমে উৎপাদন হবে ১ লাখ মেট্রিক টন সবজি।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে ‘রূপবান’ শিম চাষে বিপ্লব
চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে করলার চাষ করেছেন কাজিরহাট এলাকার আনোয়ার মোল্লা। করলার বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় অন্তত ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। আনোয়ার মোল্লা বলেন, ‘গত বছর ১ বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এতে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি এ জমি থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো করলা বিক্রি করতে পারবো।’
মূলনা এলাকার সবজি চাষি নুরু কাজী ৩ বিঘা জমিতে কালো বেগুন, দুন্দুল, করলা আর লাউ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘একসময় আমাদের এলাকায় অন্য ফসল করতাম। কয়েক বছর ধরে শীতকালীন সবজি চাষ করা শুরু করি। প্রথম প্রথম তেমন ভালো দাম না পেলেও বর্তমানে সবজি বাজার খুবই ভালো যাচ্ছে। আমাদের এখানকার সবজি ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এসে নিয়ে যান। আমরা ভালোই লাভ করছি।’
আরও পড়ুন: শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত ঝালকাঠির কৃষক
গোপালপুর এলাকার দুলাল কাজী বলেন, ‘বাজারে দিন দিন কীটনাশক, সার আর বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। যদি সরকার থেকে এসব কৃষিপণ্যের ওপর ভর্তুকি দেওয়া হতো, তাহলে আমরা অনেক বেশি লাভবান হতে পারতাম। পাশাপাশি আমাদের সবজি চাষও বেড়ে যেত।’
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাজিরা এলাকার কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষের মাধ্যমে সার্বিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের স্বচ্ছলতা দিন দিন বাড়ছে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছি। সার প্রয়োগ, কীটনাশক প্রয়োগ, রোগবালাই দমনে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছি।’
এসইউ/এমএস