দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট পাখি টুনটুনি
‘রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনির ঘরেও সে ধন আছে’ গ্রামবাংলার ছড়াটি অনেকেরই হয়তো মনে পড়বে। গল্পটিও অনেকের জানা, রাজার সিন্দুকের স্বর্ণমুদ্রা রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যার সময় রাজার লোকেরা একটি স্বর্ণমুদ্রা ঘরে তুলতে ভুলে যায়। তখন টুনি সেই স্বর্ণমুদ্রা খুঁজে পেয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। আর খুশিতে উপরের বাক্যটি বলতে থাকে।
যারা সচক্ষে দেখেননি; তারাও গল্পটির মাধ্যমে টুনটুনি পাখিকে ঠিকই চিনতে পেরেছেন। একসময় গ্রামবাংলার সব জায়গায় দেখা মিলতো দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট পাখি টুনটুনির। এদের কিচিরমিচিরে মুখর থাকতো গ্রামীণ পরিবেশ। তবে এখন হয়তো তেমন একটা দেখা মেলে না টুনটুনি পাখির।
টুনটুনির বৈজ্ঞানিক নাম ‘অর্থোতমোস অত্রগুলারিস’। ইংরেজি নাম ‘ডার্ক নেকড টেইলরবার্ড’। ঠোঁটের সাহায্যে গাছের পাতা ঠোঙার মতো মুড়িয়ে সেলাই করে বাসা বানায় এরা। তাই একে ‘দরজি পাখি’ নামেও ডাকা হয়। টুনটুনি আকারে প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার। বুক ও পেট সাদাটে। ডানার উপরিভাগ ও মাথা জলপাই লালচে। লেজ খাড়া, এতে কালচে দাগ আছে।
আরও পড়ুন: যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘহও মাছরাঙা
পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতির টুনটুনি পাখি আছে। বাংলাদেশে আছে কালো গলা, পাহাড়ি ও পাতি প্রজাতির। শিম, লাউ, কাঁঠাল, সূর্যমুখী, লেবু, শীতাফল, ডুমুর, কাঠবাদাম গাছে এরা বেশি বাসা বাঁধে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি একত্রে মিলে বাসা তৈরি করে। এদের নির্মাণশৈলী এতই মনোরম, অন্য পাখির চেয়ে একেবারেই আলাদা ও অন্যতম।
টুনটুনি সচরাচর পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খায়। এছাড়া কেঁচো, মৌমাছি, ফুলের মধুও খেয়ে থাকে। এদের খাদ্যতালিকায় আরও আছে ধান-পাট-গম পাতার পোকা, শুয়োপোকা এবং এর ডিম ইত্যাদি। টুনটুনি বছরজুড়ে বংশ বিস্তার করলেও এদের প্রজনন ঋতু মূলত বর্ষাকাল।
টুনটুনি খুবই চতুর প্রকৃতির পাখি। বাড়ির আশপাশে ঝোঁপঝাড়ে মানুষের ছত্রছায়ায় এরা থাকতে বেশ পছন্দ করে। অস্থির ও চঞ্চল প্রকৃতির হওয়ায় এক জায়গায় টুনটুনি কখনো বসে থাকে না। এই আছে তো, এই নেই।
আরও পড়ুন: কৃষ্ণচূড়ার ডালে চড়ুই পাখির মেলা
দিন দিন গাছপালা, ঝোঁপঝাড়, খাল-বিল, নদী-নালা ধ্বংস ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে দেশি এ পাখি। এ পাখি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি। পাশাপাশি এদের আবাসস্থল রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আবাসস্থল বিনষ্টের কারণে টুনটুনির ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই এ পাখি রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
এসইউ/এএসএম