‘যারা পাগল ভাবতেন তারাই এখন আমার প্রশংসা করেন’
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিতে মনোনিবেশ করেন ফরহাদ হোসেন মুরাদ। তবে তার এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আশপাশের মানুষদের নিচু মানসিকতা। নানা ধরনের কটূক্তি দিয়ে তার মনোবল ভাঙার চেষ্টা করতো তারা। এমনকি অনেকেই তাকে পাগল বলতে শুরু করেন। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। আর তাইতো তিনি এখন একজন সফল চাষি।
ফরহাদ হোসেন মুরাদ মিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের ভারত সীমান্তবর্তী নোয়াপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরপরই শুরু করেন কৃষি কাজ। ২০২১ সালে পরিকল্পনা করেন মাল্টার বাগান করার। আগস্টে নিজেদের অনাবাদি ২০০ শতক জমিতে বারি-১ ও ভিয়েতনামের ৬০০টি মাল্টার গাছ দিয়ে শুরু করেন নিজের নতুন পথচলা।
এ পথচলা তার জন্য সহজ ছিল না। প্রতিটি কাজেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছেন সবাই। কিন্তু মানুষের কথায় কান না দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে গাছগুলো পরিচর্যা শুরু করলো মুরাদ। মাত্র দুই বছরেই তিনি এখন সফল মাল্টাচাষি। সব মিলিয়ে বাগানটিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬লাখ টাকা। প্রথম বছরেই এই বাগান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়া মিস্ত্রি বানালেন ‘কাঠের মাইক্রো’
ফরহাদ হোসেন মুরাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার এলাকায় অনেকেই লেবু চাষ করতেন। এ বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখি লেবু এবং মাল্টা প্রায় একই প্রজাতির। পার্থক্য শুধু আকার এবং স্বাদে। এরপর প্রায় এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু মাল্টা বাগান পরিদর্শন করি। এতে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এরপর অনুষ্ঠানিকভাবে যখন মাল্টা বাগান শুরু করি, তখন এলাকার মানুষ আমাকে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করেছেন। অনেকেই আমাকে পাগল ভাবতেন। তবে আমি বিশ্বাস করতাম একদিন সফল হবো। তাই কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজ অব্যাহত রেখেছি। এখন আমি একজন সফল চাষি। যারা আমাকে পাগল ভাবতেন তারাই এখন আমার প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিটি গাছে প্রচুর ফলন এসেছে। আশা করছি প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। এছাড়া এই বাগানের পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভার্মি কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করছি। আশা করছি এই অঙ্গনেও সফলতা অর্জন করবো।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ সোলায়মান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ভারত সীমান্তবর্তী নিচু ভূমিতে মুরাদ বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষাবাদে পরামর্শ চাইলে প্রথমে আমি নিরুৎসাহিত করি। কারণ একদিকে নিচু ভূমি, অন্যদিকে ভারতের পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকায় প্রায়ই প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে তার আগ্রহ দেখে ভূমি উপযোগীভাবে চাষাবাদে তাকে পরামর্শ দিতে থাকি। তিনি তার মেধা এবং পরিশ্রমের ফলে আজ সফলতা লাভ করেছেন। তাকে দেখে উপজেলায় আরও অনেকই আগ্রহী হয়ে উঠছেন মাল্টাচাষে।
আরও পড়ুন: আচার বিক্রি করে সংসার চলে বিল্লালের
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হোসেন বলেন, মুরাদের সফলতা গল্প শুনে আমি তার মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেছি। তিনি একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। এখন থেকে সরকারিভাবে তাকে সব ধরনের কৃষি সহায়তা দেওয়া হবে।
জেএস/জেআইএম