স্মার্ট কৃষিকে সক্ষম করবে যেসব প্রযুক্তি
কৃষিতে এআই, আইওটি এবং বিগ ডেটার গবেষণা উদ্ভাবন এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা তৈরি করা। কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনশীলতাকে ডিজিটাইজ এবং স্বয়ংক্রিয় করতে ডেটা চালিত কৃষি পরিষেবা নিশ্চিত করা। খাদ্য-পুষ্টি নিরাপত্তা, কৃষি-পরিবেশ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল ফার্মিং সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা নিশ্চিত করতে ডিজিটালভাবে কৃষকদের ক্ষমতায়ন করা। ভবিষ্যতে কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে; কৃষিকে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিমান প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এআই, আইওটি এবং বিগ ডেটা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
ডিজিটালভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষক তথা মাঠ পর্যায়ে আগাম স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা পৌঁছে দিয়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়া, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, বন্যার আগাম বার্তা দিয়ে ফসলকে রক্ষা করবে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পোকামাকড়ের এবং রোগ থেকে ফসলকে রক্ষার প্রভাস জানিয়ে ফসলকে রক্ষা করবে। ফলে কৃষকের সময়, খরচ ও ফসল বাঁচবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমান (এআই)
মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হলো মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে কৃষি ভেলু-চেইনের বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষি ও বাগান কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করতে ডেটা চালিত ডিজিটাল ফার্মিং সমাধান প্রদান করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমান বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) বেইজ কৃষি ফসলের রোগ এবং পোকামাকড় শনাক্তকরণ এবং সমাধান প্রদান করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়া, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, বন্যার আগাম বার্তা দিয়ে ফসলকে রক্ষা করবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পোকামাকড়ের এবং রোগ থেকে ফসলকে রক্ষার প্রভাস জানিয়ে ফসলকে রক্ষা করবে। ফলে কৃষকের সময়, খরচ ও ফসল বাঁচবে। বর্তমানে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টের ব্যবহার প্রাণিসম্পদ, মৎস্যসম্পদ এবং মাঠ ফসলে উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও বর্তমানে ব্যবহার শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধান রোপণে কম খরচে কৃষকের স্বস্তি
ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন কৃষি ক্ষেত্রে ড্রোন প্রযুক্তি, ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
কৃষি ড্রোনের বৈশিষ্ট্য
উদ্ভিদ সুরক্ষা ড্রোন: অপারেশনে দ্রুত, দক্ষ এবং কার্যকরী। ড্রোন স্প্রে করা ন্যূনতম সময়ের মধ্যে অনেক বড় এলাকা কভার করে। যাতে অপারেটরদের স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।
মাল্টি ইউটিলিটি এরিয়াল প্ল্যাটফর্ম: এটি স্প্রে করার জন্য আমাদের বায়বীয় প্ল্যাটফর্ম। যা সরাসরি বীজ বপন, সার প্রয়োগ এবং পরাগায়ন পর্যন্ত পরিবর্তনশীল হারে স্প্রে করা থেকে শুরু করে কৃষি ভেলু-চেইন জুড়ে অন্য ক্রিয়াকলাপগুলোকে কভার করার জন্য সচেষ্ট থাকে।
ফসল স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ: আমাদের ড্রোনভিত্তিক ইমেজিং শস্য ক্ষতি কমাতে এবং কৃষকের উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে প্রাথমিক চাপ শনাক্তকরণের জন্য ফসলের ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ সক্ষম করে। ফলন এবং কীটপতঙ্গের পূর্বাভাস নিশ্চিত করে।
এআইভিত্তিক ক্রপ ফেনোটাইপিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদমের সঙ্গে মিলিত ড্রোন ইমেজিং উদ্ভিদের সংখ্যা, উদ্ভিদের উচ্চতা, গাছপালা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ফোকাস করে স্কেলে ক্রপ ফেনোটাইপিং সক্ষম করে।
আরও পড়ুন: রোপা আমন চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা
হাইপার স্পেকট্রাল ইমেজিং (এইচএসআই): আমাদের এইচএসআই সিস্টেম বর্ণালিজুড়ে তথ্য দেয়। যা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলোর খুব বিশদ তথ্য দেয়।
কাস্টম সমাধান: গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি কোম্পানিগুলোকে তাদের ক্লায়েন্টদের আরও ভালো পরিষেবা দিতে এবং টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করতে সর্বশেষ ড্রোন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করে।
বীজ ড্রোনের বৈশিষ্ট্য
এরিয়াল সার্ভে এবং ম্যাপিং: ড্রোন এবং এআই ব্যবহার করা হয় ভূখণ্ডের জরিপ এবং ম্যাপ করার জন্য পুনঃবনায়নের প্রয়োজনীয় স্থানগুলো চিহ্নিত করতে।
বনের প্রয়োজনীয়তা বোঝা: এআই ব্যবহার করে মাটি, জলবায়ু, দেশীয় বীজের জাত এবং ঐতিহাসিক বৃদ্ধির ডেটার মতো বিভিন্ন পরিমিতির ওপর ভিত্তি করে বৃক্ষ নির্ধারণ করুন।
বীজ বল প্রস্তুতি: বীজ বলগুলো একটি সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে পরিচালিত কার্যকলাপে গ্রামীণ কর্মসংস্থান এবং অন্তর্ভুক্তি তৈরি করে।
ড্রোন স্থাপন: বনায়নের জন্য ড্রোনগুলো দ্রুত এবং মাপযোগ্য, নির্ধারিত এলাকায় বীজ ফেলে দেয়; দুর্গম ভূখণ্ডের ওপর দিয়েও এলাকায় পৌঁছাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে পরীক্ষামূলক রাম্বুটান চাষে সফল নাজমুল
জিওট্যাগিং ড্রোন পথ: ড্রোন দ্বারা অনুসৃত পথটি জিওট্যাগ করা হয়, যা গাছের পরিসংখ্যান সংগ্রহের জন্য বপন করা এলাকার পর্যায়ক্রমিক ড্রোন পর্যবেক্ষণের সুবিধা দেয়।
পোস্ট বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ: বন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ তৈরি করার জন্য জিওট্যাগযুক্ত বীজ বলগুলো বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধির জন্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ক্লাউড প্রযুক্তি এবং আইওটির বৈশিষ্ট্য
অত্যাধুনিক মেশিন লার্নিং মডেল দ্বারা চালিত মাটির পুষ্টির তাৎক্ষণিক নির্ণয় (ইন্টেলিজেন্ট সয়েল সেন্সর (আইএসএস) দ্রুত এবং সাশ্রয়ী উপায়ে মাটির আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, লবণাক্ততার এইচপি এবং মাটির প্রধান পুষ্টি উপাদান বিশ্লেষণ করতে পারে।
সার-সংক্রান্ত সুপারিশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়। কৃষকদের ফসল, মাটির ধরন এবং মাটির পুষ্টির স্তরের ওপর ভিত্তি করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার এবং জিঙ্কের জন্য সারের সুপারিশ প্রদান করা হয়।
বিগ ডাটা
বিগ ডাটা হলো স্ট্রাকচার্ড, সেমি স্ট্রাকচার্ড এবং আনস্ট্রাকচার্ড ডেটার সংমিশ্রণ, যা সংস্থাগুলো দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের জন্য খনন করা যেতে পারে। মেশিন লার্নিং প্রকল্প, ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেলিং এবং অন্য উন্নত বিশ্লেষণ অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক: লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, ঢাকা।
এসইউ/এএসএম