কখন লাউ চাষ করবেন?
বাংলাদেশের অন্যতম সুস্বাদু সবজি লাউ। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারের উপযোগী লাউয়ে ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি আছে। লাউয়ে অন্য পুষ্টিগুণও আছে। যেমন- খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.১ গ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম এবং শর্করা ১৫.১ গ্রাম।
লাউ বপনের সময় হচ্ছে মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য কার্তিক (আগস্ট-অক্টোবর) এবং মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ (ফেব্রুয়ারি-মে)। জাতভেদে বীজের পরিমাণ হবে শতক প্রতি ৪-৫ গ্রাম।
পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বাড়ে। ৫X৪ ইঞ্চি আকারের ব্যাগে সমপরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করুন। তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে রৌদ্রোজ্জ্বল, সহজে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন উর্বর জমি বীজতলার জন্য বেছে নিতে হবে। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ ১-২ ইঞ্চি গভীরে পুঁতে ঢেকে দিন।
আরও পড়ুন: কামরাঙা শিম চাষ করবেন যেভাবে
প্রতি শতকের জন্য সারের পরিমাণ হবে গোবর বা কম্পোস্ট ৪০ কেজি, ইউরিয়া ২ কেজি, টিএসপি ১.৬ কেজি, এমপি ১.২ কেজি, বোরণ ১০ গ্রাম।
পিট তৈরির সময় সব গোবর, টিএসপি, বোরণ, অর্ধেক পটাশ এবং পাঁচ ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানের ১০-১৫ দিন পর জমিতে বীজ বপন করতে হয়। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার সমান চার কিস্তিতে পুরো জীবনকালে উপরিপ্রয়োগ করতে হয়।
প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে। যেসব ফল ধরেছে; সেগুলো আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। লাউয়ের সব জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবে না। শুধু সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। প্রয়োজনে সেচ নালা থেকে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া যায়। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৬ কোটি টাকা বিক্রির আশা
সেচ ও সার দেওয়ার পর জো আসা মাত্র আগাছা দমন করুন। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে রবি মৌসুমে ৫০-৬০টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০টি চারা রাখা উত্তম। অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দিতে হবে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিন।
লাউ চাষের পর রোগবালাই দমনে কৃষি বিভাগের সাহায্য নিতে পারেন। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যা করবেন। এছাড়া বালাইনাশক বা কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালোভাবে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোশাক পরবেন। এ সময় ধূমপান এবং পানাহার করবেন না।
বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে, তা লক্ষ্য রাখবেন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করবেন। জাতভেদে ফলন আসতে পারে শতক প্রতি ১৪০-১৫০ কেজি।
এসইউ/এমএস