কামরাঙা শিম চাষ করবেন যেভাবে
বরবটি ও দেশি শিমের মতোই লতা জাতীয় উদ্ভিদ হচ্ছে কামরাঙা শিম। এর ফুল, ফল, লতা, পাতা, শিকড় সবই খাওয়া যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উচ্চতায় (১৫০০-২৫০০ ফুট) এ সবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ফলে দেশের পার্বত্য জেলাগুলোয় কামরাঙা শিম চাষ হয় বেশি। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলেও সীমিত আকারে এ শিম চাষ করা হয়। এ সবজি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা কম হওয়ায় অপেক্ষাকৃত শুকনা এলাকায় চাষের প্রচলন বেশি। এটি মূলত বসতবাড়ি ও তার আশেপাশে সীমিত আকারে চাষ করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে অন্য সবজির মতো কামরাঙা শিম চাষের প্রবণতা বেশি দেখা যায় না।
কামরাঙা শিমের জাত
এ দেশে কামরাঙা শিমের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ তেমন নেই। তবে বারি কামরাঙা শিম-১ নামে একটি জাত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট অবমুক্ত করেছে। দেশি জাতগুলো মূলত আলোকসংবেদনশীল। তাই এ সবজি হেমন্ত, শীত ও বসন্তকালে দিনের আকার ছোট থাকায় চাষ করা হয়। বিদেশে নানা প্রজাতির শিম দেখা যায়। কোনো কোনো বিদেশি জাত বড় দিনেও অর্থাৎ গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফুল-ফল ধরে।
আরও পড়ুন: বেকারত্ব ঘুচিয়ে আব্দুল মান্নান এখন সফল খামারি
চাষ করবেন যেভাবে
বরবটি বা দেশি শিমের মতো সারি করে বীজ বপন করা হয়। প্রতি সারির মাটি ২০-২৫ সেন্টিমিটার গভীর করে কুপিয়ে মাদা তৈরি করে নেওয়া দরকার। বেশি ফলন পেতে মাদায় যথেষ্ট পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে নেওয়া ভালো। কামরাঙা শিম চাষের জন্য খুব উর্বর জমি দরকার হয় না। অনুর্বর বেলে বা এঁটেল মাটিতেও ভালো জন্মে। চাষে খুব বেশি সার দিতে হয় না। পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু জমিতে চাষ করা ভালো। ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২.৫৪ সেন্টিমিটার লম্বা মাদায় ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি মিলে প্রায় ১৫০০ গ্রাম সার জমি তৈরিকালে দিলে ফলন ভালো হয়। চারা গাজানোর প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ২০ দিনের ব্যবধানে আরও ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া সার ২-৩ কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। ঠিকমতো আলো-বাতাস পায় এমন জায়গায় ফলন ভালো হয়। উন্মুক্ত আধা ছায়াতেও ফলানো যায়। তবে বেশি ছায়ায় ফসল ভালো হয় না। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ শিম প্রতিটি বাসা-বাড়িতে এবং বাড়ির ছাদে চাষের জন্য উপযোগী।
বীজ বপনের উপায়
বীজের আবরণ খুব শক্ত হওয়ায় অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কম। তাই বীজ বপনের আগে তা ২০-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নেওয়া ভালো। সাধারণত ৮-১০ ইঞ্চি দূরত্বে ১ ইঞ্চি গভীরতায় বীজ বপন করা হয়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ৩-৪ ফুট। বীজ বপনের ৫-৭ দিনের মধ্যে তা গজিয়ে দ্রুত বাড়তে থাকে। এ ভাবে ৪-৫ সপ্তাহ বৃদ্ধির পর অনুকূল আবহাওয়ায় দিনের পরিধি কমে গেলে গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে। কামরাঙা শিমের শিকড় থেকেও চারা তৈরি হয়। মৌসুম শেষে বয়স্ক গাছের শিকড় সংগ্রহ করে রেখে দিয়ে শরৎ-হেমন্তকালে বীজের বিকল্প হিসেবে রোপণ করা যায়। বাড়ির আঙিনায় ১.৫-২.০ সেন্টিমিটার লম্বা কাঠির বাউনি বা ছোট আকারের মাচা তৈরি করে তাতে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কাঠি বা কঞ্চি খাঁড়া করে দিয়ে বাউনির ব্যবস্থা করে খুব সহজেই চাষ করা যায়।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে লটকন চাষে সফলতার স্বপ্ন কৃষকদের
কেমন পরিচর্যা দরকার
বীজ বপনের পর মাটি বেশি শুকনা হলে গজাতে দেরি হতে পারে। তাই মাটিতে রসের অভাব হলে ২-৩ দিনের ব্যবধানে হালকাভাবে সেচ দেওয়া যেতে পারে। চারা গজিয়ে এক ফুট লম্বা হলে আগা ভেঙে দেওয়া দরকার। তাতে শাখা-প্রশাখার সংখ্যা বাড়বে, ফুল-ফল বেশি হবে। লতানো গাছে বাউনি হিসেবে ২.৪-৩.০ সেন্টিমিটার লম্বা কাঠি দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি দুই সারির কাঠির আগা বেঁধে দিলে উভয়দিক থেকে বাড়ন্ত লতা সুন্দরভাবে বাড়তে সহায়ক হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় কম চওড়া বিশিষ্ট মাচা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। গোড়ার মাটিতে রসের অভাব হলে মাঝে মাঝে হালকা সেচ দেওয়া দরকার। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে। জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাটিতে চট ধরলে আলগা করে দিতে হবে।
ফলন কেমন হবে
প্রতি গাছ থেকে প্রায় ৪০-৬০টি কচি সবজি তোলা যায়। এ সবজির পরিমাণ প্রায় ৪-৫ কেজি হয়। স্বল্প পরিসরে ২০-৩০টি গাছ রোপণ করলে প্রতি পরিবারের জন্য প্রায় ১০০-১২৫ কেজি মৌসুমে সবজির প্রয়োজনীয়তা মেটানো যায়। এ সবজির পাতা, ফুল, ফল, বীজ, শিকড় সবই অতি পুষ্টিকর ও আহার উপযোগী। এমনকি ভেষজ ওষুধিগুণসমৃদ্ধ হওয়ায় এর সুফল সবাই পান।
এসইউ/এএসএম