গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি
কালীগঞ্জে ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়ছে খামারির
গাজীপুরের কালীগঞ্জে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর খামারিরা। ছোলা, ভুট্টা, ভুসি, ফিড ও খড়ের দাম বেশি হওয়ায় এসব খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তারা। কৃষক ও খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে গরু লালন-পালন শুরু করেছেন। ফসল কম হয় এমন অনাবাদি জমি, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, পতিত জায়গা ও সড়কের দুপাশে ব্যাপকভাবে ঘাস চাষ শুরু করেছেন অধিকাংশ কৃষক। অনেকেই নিজের খামারের চাহিদা পূরণ করে অন্যের কাছে বিক্রি করেও বেশ লাভবান হচ্ছেন। অনেকে আবার গবাদিপশুর জন্য বাড়তি খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস কিনে খাওয়াচ্ছেন। এতে দুধ দেওয়া গরুর দুধের পরিমাণ বাড়ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নেই বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ করছেন গরুর খামারিরা। এখানে ৩১.৬৯ একর জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করা হয়। ওই পরিমাণ জমিতে ২৯ হাজার ১৭ টন ঘাস উৎপাদন হয়। এতে নিজেদের খামারের ঘাসের চাহিদা মিঠছে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে আয়ও করছেন।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে ৪৫ কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন হবে
কালীগঞ্জে স্থায়ী ঘাস হিসেবে নেপিয়ার পারচুং-১, জাম্বু, জার্মান, পারা ও নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। আবার মৌসুমি ঘাস হিসেবে ভুট্টা, খেসারি ও মাসকালাই চাষ করে থাকেন। ফসল ভালো হয় না এমন জমিতে অনেক কৃষক উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় খামারিরা বাজারের গোখাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ঘাসের ওপর ঝুঁকে পড়ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামের মো. ফরিদ হোসেন মোড়ল বলেন, ‘আমি সাড়ে তিন বিঘা জমির মধ্যে নেপিয়ার পারচুং-১ জাতের সবুজ ঘাস চাষ করেছি। যা আমি পুকুর পাড় ও সমতল জমিতে চাষ করেছি। আমার খামারে গরুকে এটি খাওয়ানোর পরও অতিরিক্ত ঘাস থেকে যাচ্ছে। যা অন্য খামারির কাছে বিক্রি করে ভালো আয় করছি।’
আরও পড়ুন: পিরোজপুরে কলা চাষে ভাগ্য বদলেছে কৃষকের
জামালপু ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের মো. মোস্তফা মোল্লা বলেন, ‘আমার গরু এবং ছাগলের খামার আছে। তাই গরুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ঘাস চাষ করি। আমি ৭টি স্থানে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করি। এ মুহূর্তে আমার এখানে ১০ জাতের ঘাস আছে। পাশাপাশি নতুন কোনো জাত এলে সেটিও নিয়ে আসি। সেটা যদি জমিতে ভালো ফলন দেয়, তাহলে রাখি। ফলন ভালো না হলে বাদ দিয়ে দিই। এভাবেই আমি ঘাসের জাত ছড়িয়ে দিই।’
গোল্লারটেক গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি মূলত গরু পালন করি। আমার দুটি খামার আছে। গোখাদ্য ও খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ৩টি স্থানে ২ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছি। এতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। তাই লাভের পরিমাণ বেশি। নিজের খামারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করে পোষাতে পারব বলে আশা করছি।’
আরও পড়ুন: স্বপ্ন দেখাচ্ছে সূর্যমুখীর হাইসান-৩৬ জাত
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের অধীনস্থ প্রাণী পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট (সিইএ) আবু নাঈম বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের পতিত জায়গা, অনাবাদি জমি, বাড়ির আঙিনা, সড়কের পাশে, পুকুর পাড়ে উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। এ জন্য আমরা খামারিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ হাবীব বলেন, ‘উপজেলার প্রায় সব খামারে দুধ বিক্রির জন্য এসব গরু পালন করা হয়। যেভাবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে খামারিদের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিকল্প হিসেবে খামারিদের অনাবাদি জমি, পতিত জায়গায় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে কৃষক সফলতা পেলে গোখাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে।’
আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/জেআইএম