সবুজ মাঠে সূর্যমুখীর হলুদ হাসি
মামুনূর রহমান হৃদয়
দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাটির বুকে বিশাল আকৃতির হলদে চাদর বিছানো। কাছে গেলে সেই ভুল ভাঙবে। আর চোখে পড়বে হাজারও সূর্যমুখী ফুল। বৈশাখী বাতাসে দুলতে থাকা ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।
দিনভর এই সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। অবসর সময়ে ও দুপুরের তপ্ত রোদের পরে সূর্যমুখী বাগান পরিণত হয় নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায়। সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে। কেউ বন্ধু-বান্ধব কিংবা কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে। স্মৃতির বেড়াজালে বেঁধে রাখতে কেউ তুলছেন ছবি।
মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্যের দেখা মেলে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণজাত গ্রামে। যেখানে প্রতিদিন শত শত প্রকৃতিপ্রেমী হাজির হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলেই হয়তো এর এমন নামকরণ।
আরও পড়ুন: নড়াইলে সূর্যমুখী চাষে লাখ টাকা ঘরে তোলার আশা
সূর্যমুখী রূপে নয়, গুণেও সেরা। সূর্যমুখী বীজের তেল স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী। অন্য তেলবীজে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পাশাপাশি অনেক উপাদান থাকে। তবে সূর্যমুখীতে তা নেই। উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামাঞ্চলে বোতলজাত সূর্যমুখীর তেল পাওয়া যায়। এগুলো বহুজাতিক কোম্পানির নিজস্ব উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা। দাম বেশি, তাই সাধারণের খাদ্যতালিকায় প্রচলন কম।
তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য সূর্যমুখীর তেলের বিকল্প নেই। ভারতে এ তেল খুবই জনপ্রিয় ও প্রচলন চোখে পড়ার মতো। অন্য তেলের চেয়ে দাম বেশি হলেও ভারতের বাজার অনুযায়ী সহনশীল। তাই ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে অঞ্চলভেদে সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। সূর্যমুখীর উৎপাদনও ভারতে মন্দ নয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জল, মাটি সূর্যমুখী চাষের অনুকূলে এবং সম্ভাবনাময়। আমরা বিদেশ থেকে যেই রিফাইন্ড সয়াবিন তেল আমদানি করি, তাতে আছে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। অথচ আমরা যদি দেশীয়ভাবে সূর্যমুখীর বীজকে প্রধান্য দিয়ে রিফাইন্ড না করেও শুধু ঘানিতে সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল সংগ্রহ করি। আমাদের এই ভোজ্যতেলই হতে পারে পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাস্থ্যকর।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সূর্যমুখী চাষে লাভের আশা
সূর্যমুখীর বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা ক্যান্সারের কোষ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি হাড়ের সুস্থতার জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম দুটোই খুব জরুরি। সূর্যমুখীর বীজ খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস। তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়ক। এছাড়াও এতে আছে অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টিজ। যা ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে। তাছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে আছে ভিটামিন বি-৬ যা চুলপড়া রোধ করে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জেআইএম