যমুনার বালুচরে সূর্যমুখীর হাসি
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যমুনার বিস্তীর্ণ বালুচরে সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের চরজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে ফুটন্ত ‘সূর্যমুখী’ ফুল। দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এ ফুল দেখতে আর সূর্যমুখী বাগানে নিজেদের ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছেন। এতে বাগানের কিছুটা ক্ষতিও হচ্ছে। ফলে খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন বাগান মালিক।
উৎসুক মানুষের কাছে এসব সূর্যমুখী ফুল শুধু সৌন্দর্যের ডালপালা মনে হলেও বাস্তবে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর একটি উপকরণ এটি। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো বীজ থেকে উৎপাদিত হয় তেল। পাশাপাশি এ ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গোখাদ্য।
তুলনামূক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখীর আবাদে উৎসাহী হয়েছেন উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন। দ্বিতীয়বারের মতো এবার সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি তিনি। মাটি ও আবহাওয়া এ ফুল চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনায় দিন দিন চওড়া হচ্ছে চাষির মুখের হাসি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ
আলতাফ হোসেন সরকার (৭০) একসময় একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি গত ২০১০ সালে অবসরে যান।অবসর নেওয়ার পর চরের জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। কৃষক হিসেবেও সফলতা অর্জন করেন। একদিন পত্রিকায় সূর্যমুখীর তেলের পুষ্টিগুণ ও ফলন দেখে গত বছর কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পান।
তিনি এবারও ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবার সূর্যমুখীর ফলন আরও ভালো হয়েছে। সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন আলতাফ হোসেন সরকার।
গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে আলতাফ হোসেনের ৫ বিঘা জমিসহ চরে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ বুনতে হয়। দেড় ফুট দূরত্বে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সরিষার হলুদ ফুলে কৃষকের মুখে হাসি
স্থানীয় চিকিৎসক ডা. উত্তম দেবগুপ্ত বলেন, ‘সূর্যমুখীর তেলে আছে শতভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। এ তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে ও মিনারেল। এ ছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য সূর্যমুখী তেল নিরাপদ।’
গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবিত সূর্যমুখী উচ্চ ফলনশীল ও বেশি লাভজনক। কম সময়ে কম পরিশ্রমে উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায়। সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যসম্মত এবং রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের ফলন দেখে আগামীতে চাষের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে।’
এসইউ/জেআইএম