মরুর গোলাপ অ্যাডোনিয়ামের যত্ন নেবেন যেভাবে
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
অ্যাডোনিয়ামকে বলা হয় মরুর গোলাপ। ছোট গাছ হলেও এতে অনেক ফুল ফোটে। আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমি। এপোচাইনেসি পরিবারভুক্ত গাছ। শীতের সময় এরা এক প্রকার ঘুমিয়ে থাকে। শীতের পর থেকে আবার শীত আসা। এই সময়টা অবিরাম ফুল দিয়ে থাকে।
অ্যাডোনিয়াম ফুলের রং সাধারণত গোলাপি, লাল ও সাদা বর্ণের হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরে ফুল ফোটে। এই গাছ প্রচুর পানি ধরে রাখতে পারে। শীতকালে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলেও মরে না। বাহ্যিক এই গাছের গঠনপ্রকৃতি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিকভাবেই এরা বনসাই প্রকৃতির।
গাছগুলো ৫০-১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। যখন টবের মাটি একদম শুকিয়ে যায়, তখন পানি দিলে হবে। এছাড়া খুব একটা পরিচর্যার দরকার নেই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অ্যাডোনিয়াম স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে। কলকাতার ফুলবিজ্ঞানী সুবিল চন্দ্র দে তার ফুলের চাষ বইয়ে এ ফুলের নাম দিয়েছেন ‘কিন্নরী’। টব অ্যাডোনিয়াম চাষের জন্য উপযুক্ত।
বাণিজ্যিকভাবে অ্যাডোনিয়ামের চাষ হয় থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। বাংলাদেশের কিছু শৌখিন বাগানী অ্যাডোনিয়ামের চাষ করেন। রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টারে প্রচুর অ্যাডোনিয়াম আছে বলে জানা যায়।
শখেরবশে অ্যাডোনিয়ামের চাষ করেন। প্রচুর সংখ্যক গাছ আছে। পরিচিতি পেয়েছেন ব্যাপকভাবে। এ রকম হাতেগোনা কয়েকজন আছেন। মারুফ হাসান তাদের মধ্যে অন্যতম। অ্যাডোনিয়াম বিশেষজ্ঞ হিসেবে যিনি ব্যাপক পরিচিত।
তিনি জানিয়েছেন কীভাবে অ্যাডোনিয়াম লাগাতে হবে ও যত্নআত্তি কীভাবে করতে হবে। তার মতে, একটু যত্ন নিলেই শৌখিন বাগানিরা অ্যাডোনিয়াম থেকে প্রচুর ফুল পেতে পারেন।
মিডিয়া তৈরি
মারুফ হাসান বলেন, ‘অ্যাডোনিয়ামের মিডিয়া হবে এমন, যাতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিউটেন্ড থাকবে। পানি দিলে যেন জমে না যায়।’
‘উপকরণ হলো মাটি, বালু, হাড়ের গুঁড়ো, কেঁচো সার ও পটাশ। এক ভাগ মাটির সঙ্গে দুই ভাগ বালু, এক ভাগের তিনের এক শতাংশ হাড়ের গুঁড়া, বাকি দুই শতাংশ কেঁচো সার, অল্প একটু পটাশ ও সামান্য ছত্রাকনাশক মেশাতে হবে।’
সব কিছু মিশিয়ে কয়েকদিন মিডিয়া রোদে রাখা উত্তম। মাটির জায়গায় শুধু বালু দেওয়া যায়। মাটিতে কিছু মাইক্রো নিউটেন্ড থাকে, যা গাছের জন্য ভালো। মাটি কিছুটা পানি ধরে রাখে, যা অনেকাংশে গাছের উপকারে আসে।
প্রুন করা
প্রুন করলে গাছের ডালপালা ও ফুল বেশি হবে। ডাল একটু তেছড়া করে কাটতে হবে। কাটা জায়গায় ছত্রাকনাশক লাগাতে হবে। কাটা ডালপালা লাগিয়ে ছায়ায় সাতদিন রাখতে হয়। যখন নতুন কুশি দেখা যাবে তখন রোদে দিন। রুট প্রুন করলে সেখানেও ছত্রাকনাশক দিতে হয়।
তবে রুট প্রুন করলে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর লাগাতে হবে। রিপট করার পর অল্প পানি দিয়ে কয়েকদিন ছায়ায় রাখা উত্তম। পরে পরিমান মতো পানি দিয়ে রোদে রাখতে হবে।
অ্যাডোনিয়ামে মিলিবাগ আক্রমণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে ইমিটাফ কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় শিকড় বা গোড়া পচে যায়। সেজন্য পচা অংশ ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। তারপর ছত্রাকনাশক লাগিয়ে সাতদিন ছায়ায় রাখুন। এজন্য ছত্রাকনাশক দেওয়া মিডিয়ায় লাগানো ভালো।
জেএমএস/এমএস