বেশি ফলনেও হতাশ চরাঞ্চলের কৃষকরা
উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার চরগুলোতে ব্যাপক ফলন হলেও যোগাযোগের অভাবে কৃষি পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে পারেন না কৃষকরা। প্রায় সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। চরাঞ্চালের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা।
তবুও থেমে নেই চরাঞ্চালের এই দরিদ্র মানুষগুলো। বন্যার সময় সব কিছু তলিয়ে গেলেও খড়ায় নদী শুকিয়ে দুই থেকে তিন মাইল হেঁটে যেতে হয় ওই নৌ ঘাটে। তখন কৃষিজাত পণ্য মাথায় করে নিয়ে হেঁটে আসা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না এই মানুষগুলোর।
তারপর নৌকায় করে, পরে অটো বা ভ্যানে কৃষি পণ্য আনতে হয় বিভিন্ন হাট বাজারে। পরিবহন খরচ পুষিয়ে ও নির্ধারিত ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় বারো মাসে তেরো ফসল ফলিয়েও শ্রমের ন্যায্য মূল্য পান না তারা।
যেখানে নেই কোনো যানবাহন। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তার চিকিৎসা নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে। তবে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।
পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে জেগে উঠেছে ছোট-বড় ১৬৫টি চর-দ্বীপচর। এসব চরে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের একমাত্র পেশা হচ্ছে কৃষি।
মুদি দোকানী মোসলেম আলী জাগো নিউজকে বলেন, যামো কাবিলপুর, করি মনোহারি দোকানে কাঁচামালের ব্যাবসা। ঘাড়ত নিবার পারি দশ সের কিন্তু হচ্ছে একমণ এখন যাতেই হামার ঠ্যাং ছড়ায় গেল গা (পা ব্যাথা হয়ে গেছে)। কষ্ট আমগড়ে এহনে কোনো যানবহন নাই, অটো নাই, ভ্যান নাই, যাওয়ার অনেক কষ্ট। আগে ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া গেইলেও আস্তা (রাস্তা) না থাকায় এখন আর পাওয়া যায় না।
কথা হয় রহমান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, চরের মধ্যে থাকি অবাদ-সুবাদ করি, বন্যার সময় সুবিধা, আর অবন্যার সময় (শুষ্ক মৌসুম) অসুবিধা। মেলা যাগা হাঁটা নাগে (অনেক পথ হাঁটতে হয়)।
সচেতন মহল বলছে, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’প্রকল্পটির উদ্যোগ চরাঞ্চলের প্রয়োগ করা হয় তাহলে চরের মানুষের উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি করে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে চরবাসীর।
এ ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার পরীক্ষামূলকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চর উন্নয়ন বোর্ড নামের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চরে উৎপাদিত ফসল কৃষকরা যাতে সহজেই বিক্রি করতে পারে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকার চালু করেছে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’নামে আর একটি প্রকল্প। যেখানে নিশ্চিত করা হবে কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রসহ সকল নাগরিক সুবিধা।
‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র উদ্যেশ্য গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। যেখানে থাকবে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধা।
এর আগে ১৯৯৯ সালের ২০ মে শহরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অবহেলিত, অসহায় এবং ভাগ্য বিড়ম্বিত ছিন্নমূল মানুষদের গ্রামের আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’ হাতে নেন সরকার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায় সেই ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’।
এমএমএফ/জেআইএম