বন্যপ্রাণী আইনে যেসব মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ
বিলুপ্ত প্রজাতির ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বেশ কিছু মাছ ‘সংরক্ষিত মাছ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। আমরা অনেকেই হয়তো এ বিষয়ে জানি না। এসব মাছ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে।
বন্যপ্রাণী আইনের শেষে যুক্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তফসিলে মোট ৫২ প্রজাতির মাছের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী হিসেবে বিবেচিত হবে। সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী আইনের বিষয়ে প্রত্যেককে সচেতন হওয়া উচিত।
এ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী ৫২ প্রজাতির মাছ শিকার বা বন্যপ্রাণী, মাংস, ট্রফি, অসম্পূর্ণ ট্রফি, বন্যপ্রাণীর অংশবিশেষ অথবা এসব থেকে উৎপন্ন দ্রব্য দান, বিক্রি বা কোনো প্রকারে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারো কাছে হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ধারা লঙ্ঘন করলে বিচারক্রমে ৩৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কোনো ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।
এছাড়া আরও উল্লেখ আছে, আইনের ৪১ ধারা ১/২ অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করলে বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা প্রদান করে থাকলে এবং ওই সহায়তা বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হলে, সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারী তার সহায়তা বা প্ররোচনা দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল ১ অনুযায়ী ২৫টি প্রজাতি এবং তফসিল ২ অনুযায়ী ২৭ প্রজাতির, মোট ৫২ প্রজাতির মাছকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ আইন অনুসারে এ ৫২ প্রজাতির মাছ শিকার, বিক্রয় ও বিপণন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তফসিল ১-এ উল্লেখিত মাছ হচ্ছে, পাখনামাথা হাতুড়ি হাঙর, দক্ষিণি হাতুড়ি হাঙর, মসৃণ হাতুড়ি হাঙর, জেব্রা হাঙর, বাদামিদাগি বাঁশ হাঙর, মুইচিয়া হাঙর, কানি হাঙর, তিমি হাঙর, চোখা হাঙর, থুট্টি হাঙর, কালা হাঙর, রেশমি হাঙর, চওড়ামুখি হাঙর, থুটা হাঙর, দাগিলেজ হাঙর, বাঘা হাঙর, গাঙেয় হাঙর, ফৌরি হাঙর, চোখানাসা পীতম্বরী, দানব পীতম্বরী, সবুজ করাতি হাঙর, লম্বাদন্তী করাতি, হাঙর, ছুরিদন্তী করাতি হাঙর, দেশি বড় বাইন ও পাতি সমুদ্র ঘোড়া।
তফসিল ২-এ উল্লেখিত মাছ হচ্ছে, তিলা শোল, লাল-পাখনা মহাশোল, সোনালি মহাশোল, ভাঙন মাছ, নানদিনা, ঘোড়া মুইখা, দানব বাঘাইড়, চেনুয়া, কোঠা কুমিরের খিল, তেলোটাকি, তারা বাইম, নাপিত কই, নাফতানি, কুইচা, রিঠা, দেশি বোল, জয়া হিরালু, বাংলা রানি, তিলা বিশতারা, গাঙ মাগুর, ধাইন, লম্বালেজি পদ্মমামনি, বেনেটের হাউশপাতা, নীলচিত্রা হাউশপাতা, চিত্রা শঙ্খচিল, দাগি শঙ্খচিল, কাঁটালেজি দেওমাছ।
যেসব মাছ বন্যপ্রাণী আইনে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে; সেসব মাছ সংরক্ষণের জন্য আমাদের এগিয়ে আসা উচিত।
এমএমএফ/এসইউ/এএসএম