২৫০ প্রজাতির গাছ নিয়ে ছাদবাগান
ইট-পাথরের শহুরে নাগরিক জীবন থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে।
শৌখিন মানুষ তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় বাড়ির ছাদে তৈরি করছে বাগান। সময়ের সঙ্গে এ বাগান এখন আর শৌখিনতার মধ্যে নেই। একটু সবুজের ছোঁয়া পেতে শহরবাসী এখন তাদের ছাদটি সাজাচ্ছেন বিভিন্ন গাছ দিয়ে। নিজের বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদে ফল-ফলাদি চাষ করার ব্যাপারে অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর প্রয়োজনীয়তা কম-বেশি সবাই মনে করছেন।
কেননা পরিকল্পিত এবং শখের বশে ছাদকৃষি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুধু ফল-ফসলাদিরই চাহিদা মিটছে না একজন উদ্যোক্তার সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটছে। বিনিয়োগের কথা যেমন ভাবা হয় না ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তি হিসেবেও রাখা হয় না শখের এই ছাদবাগানে। এমন তাগিদ থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মিজমিজি পাইনাদী এলাকার ‘নূরুন নাহার মাতৃছায়া’য় নূরুন নাহার বেগম শুরু করেছিলেন ছাদকৃষি।
এই শহরে বাস করেও কৃষিকে ভালোবাসা এবং সবুজের ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই এক বছর আগে ছাদকৃষির বিশাল সম্ভার গড়ে তোলেন নূরুন নাহার বেগম। মাত্র ১৫০০ বর্গফুটের ছয়তলার ছাদে সৃষ্টি করেছেন ফুল, ফলমূল, শাক-সবজির অনন্য এক ক্ষেত্র। শাক সবজি, ফল-ফুল ও ঔষধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে নূরুন নাহার বেগম ছাদ কৃষির এই আয়োজন। তার ছাদবাগানটি প্রথমে যে কেউ দেখলে নার্সারি মনে করবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার এই ছাদবাগানে প্রায় ২৫০টিরও বেশি ফুল,ফল,শাক-সবজি, ওষুধি গাছ রয়েছে। গাছে ৩০-৩৫টি জাম্বুরা ঝুলে আছে। বিদেশি ড্রাগন ফল ঝুলে আছে। আরও ঝুলে আছে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, আতাফল, লেবু, বাউকুল, জামরুল। ফল গাছের মধ্যে আরও রয়েছে ত্বীন, কাউফল, আমগাছ, আমড়া, থাই তেঁতুল, জামগাছ, মাল্টা, কমলালেবু, ডালিম, ড্রাগন, পেঁপে, নারিকেল, জয়ফল, বরই। এছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জবা, নাইটকুইন, থাইপাতা, রজনীগন্ধ্যা, বেলিসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। শাক-সবজির মধ্যে কাঁচামরিচ, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, মিষ্টি আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা দেখা গেল। ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে নিমগাছ, তুলসী গাছ, ঘৃতকুমারী। এছাড়া মেহেদী গাছ, পাথরকুচিসহ আরও ছোট ছোট অনেক উদ্ভিদও রয়েছে।
নূরুন নাহার বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিভিন্ন দোকান থেকে প্লাস্টিকের অনেকগুলো বড় বড় ড্রাম সংগ্রহ করে তিনি এগুলোকে কেটে দুই ভাগ করেন। তারপর ড্রিল মেশিন দিয়ে প্রতিটি ড্রামকে ছয়টি ছিদ্র করেন। এরপর ড্রামের নিচের অংশে ইটের খোয়া দিয়ে তার উপর মাটির সাঙ্গে জৈবসার, গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা মিশ্রিত করে বাড়ির ছাদে সারিবদ্ধভাবে এসব গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন বালতির মধ্যে তিনি গাছ লাগিয়েছেন। তার এই ছাদকৃষিতে আজ পর্যন্ত কোনো পোকামাকড়, মশা-মাছি সৃষ্টি হয়নি তাই তার কোনো কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। এছাড়া তিনি তার বাড়ির ছাদে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি সর্বদা তার বাড়ির ছাদ পরিষ্কার রাখেন বলে জানান। গাছে নিয়মিত পানি দেওয়ার জন্য অত্যাধুনিক পাইপ সিস্টেম করেছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এই ছাদ কৃষি করার পর তার এখন আর শাক-সবজি, ফলমূল তেমন কিনতে হয় না। তিনি বাসার কাজের পাশাপাশি অবসর সময় তার এই ছাদকৃষিতেই ব্যয় করেন। এই কাজে তার স্বামীসহ তার পরিবার সবসময় উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে অনেক সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি আশা করছেন আগামী বছর তার এই ছাদবাগান থেকে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি পাবেন।
তার এই ছাদ কৃষির উদ্যোগ অন্যান্যদের ছাদ কৃষি করার ক্ষেত্রে রোল মডেলের ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে তিনি তার বাড়িতে আসা আগ্রহী আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ছাদ কৃষি করতে পরামর্শ দেন। তার এই ছাদবাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে তার এক প্রতিবেশী বাড়ির ছাদে এমন একটি ছাদ বাগান গড়ে তুলেছেন। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে এই ছাদবাগানকে আরও বড় পরিসরে গড়ে তোলা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, ছাদবাগানের জন্য আমাদের নারায়ণগঞ্জে তেমন কোনো প্রকল্প এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে ছাদবাগান করার জন্য উৎসাহ এবং গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এমএমএফ/এএসএম