ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

যে কারণে এবছর ঝালকাঠিতে দেরিতে পেয়ারার ফলন হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০২:৩৭ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২২

আষাঢ় মাসের শেষ দিকেও শুরু হয়নি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ‘বাংলার আপেল’ খ্যাত মিষ্টি পেয়ারার সমারোহ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৫৫ গ্রামে উৎপাদিত এই মিষ্টি পেয়ারা ফলনে বেশ দেরি হচ্ছে। পেয়ারা পরিপক্ক হতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ে সরবরাহ ও পর্যটকদের আগমনে সম্ভাবনা দেখছেন পেয়ারাচাষিরা।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মিষ্টি পেয়ারা রাজ্য। প্রতিবছর আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই পেয়ারার কারণে পাল্টে যায় এই অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারা বিক্রির জন্য এসব এলাকার খালে রয়েছে ভাসমান বাজার।

প্রতিদিন শত শত নৌকায় চাষিরা আসেন পেয়ারা বিক্রি করতে। ট্রাক ও বড় বড় ট্রলার নিয়ে আসেন পাইকাররা পেয়ারা কিনতে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আরিচা ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে।

ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারাই নয় অন্যান্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে চাষিরা পণ্যের ন্যায্য ও প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার আশা করছেন এলাকার চাষিরা।

এছাড়া প্রাকৃতিক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বাংলাদেশে প্রবাসী বিদেশি অতিথিরাও আসেন উপভোগ করতে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট সদর উপজেলার ভীমরুলীতে, যা সারাদেশেই অনন্য। এছাড়াও পাশের জেলা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) আটঘর, কুড়িয়ানা ও আতা এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খাল পাড়ে অবস্থিত।

যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় আষাঢ় মাসের শেষ দিক হলেও এখন পর্যন্ত পেয়ারা পরিপক্ক হয়নি। তাই ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাটে পাকা পেয়ারার সমারোহ নেই। দুই সপ্তাহ ধরে পেয়ারা বাগান এলাকায় যথেষ্ট বৃষ্টি ঝড়লেও এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এ ফলনে দেরি হচ্ছে।

যে কারণে এবছর ঝালকাঠিতে দেরিতে পেয়ারার ফলন হয়েছে

ভীমরুলী এলাকার পেয়ারা চাষি গৌতম মিস্ত্রি জানান, আমরা কয়েক পুরুষ পেয়ারা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিবছরের চেয়ে এবছর ফলন কম ধরেছে। ফলন যা আসছে তাও পরিপক্ক হতে দেরি হচ্ছে। মৌসুমী উপার্জন শুধু পেয়ারার দিকে তাকিয়েই দিন গুনছি। কখন পেয়ারা পাকতে শুরু করবে আর কবে তা বিক্রি করতে পারব।

ফলন দেরিতে আসার কারণ হিসেবে গৌতম মিস্ত্রি পূর্বপুরুষদের কথিত মতের বর্ণনা দিয়ে জানান, এবছর বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি। যা হয়েছে তাও আবার উত্তর-পশ্চিম দিকের ঠান্ডা বৃষ্টি।

ওই বৃষ্টির কারণে পেয়ারা গাছে ফুল দেরিতে আসছে। যদি পূর্ব দিকের বৃষ্টি হত তাহলে তা একটু গরম থাকত। আর পেয়ারা গাছেও ফুল তাড়াতাড়ি আসত। একই অভিজ্ঞতার কথা জানান আদমকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষি প্রেমানন্দ মন্ডল (৭০)। এবছর আষাঢ়ের প্রায় শেষ, শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে পেয়ারা তোলার আশা করছেন তারা।

ডুমুরিয়া গ্রামের পঙ্কজ বড়াল জানান, প্রতিবছর সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে অথবা আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে পেয়ারা পাকতে শুরু করে। এবছর পেয়ারা গাছে ফুল দেরিতে আসায় পেয়ারা পাকতেও দেরি হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ফলনও কম হয়েছে। তবে দুই বছরের করোনা চাপের পর এবছর উন্মুক্ত রয়েছে সবকিছুই।

দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে। ফলে পেয়ারার সঙ্গে অন্যান্য কৃষি পণ্যও পাইকাররা কিনে অল্প সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করতে পারবে। এতে আমরা পণ্যের ন্যায্য ও প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার কথা জানান এ প্রান্তিক চাষি।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পেয়ারার ফলনে বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিবছর এমন সময় কয়েকশ মণ পেয়ারা বিক্রি করতে পারেন চাষিরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত পেয়ারা পরিপক্ক হয়নি। আরও ১৫ দিন সময় লাগবে পেয়ারা পাকতে।

সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আরিচা ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে। ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারাই নয় অন্যান্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে চাষিরা পণ্যের ন্যায্য ও প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার আশায় বুক বাঁধছেন এই এলাকার চাষিরা।

আতিকুর রহমান/এমএমএফ/জেআইএম

আরও পড়ুন