বেশি লাভের আশায় বাড়ছে কাজু বাদামের চাষ
বেশি লাভের আশায় বান্দরবানে বাড়ছে বিদেশি কাজু বাদামের চাষ। কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেনে এ বাদাম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের। আকারে বড় ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভিয়েতনামের এম-২৩, ইন্ডিয়ান ভিএলএ-৪ ও ভাষকরা প্রজাতির কাজু বাদাম চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই তিন বিদেশি জাতের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ভিয়েতনামের এম-২৩।
বান্দরবান সদর উপজেলার সাংগ্রাই ত্রিপুরা পাড়ার কাজুবাদাম চাষি জনরাই ত্রিপুরা জনান, তার জায়গায় দেশীয় কাজু বাদামের গাছ ছিল বেশ কয়েকটি। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বান্দরবান কৃষি অফিস থেকে ৭০৫টি এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের চারা পেয়ে রোপণ করেন তিনি।
এর মধ্যে ৪০টির মতো চারা নষ্ট হয়ে যায়। চারা লাগানোর ১০ মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি গাছে দেশীয় থেকে তুলনামূলক বড় আকারের ফলন পেয়েছেন। তাই দেশীয় কাজু বাদাম গাছগুলো কেটে ফেলে ঐ স্থানে নতুন করে এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের চারা রোপণ করছেন।
এছাড়া এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের আকার ও বিশ্ববাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় ভবিষ্যতে এ কাজু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আশা করেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি এলাকার কাজু এন্ড কাজু এগ্রোর ওয়াজেদুল ইসলাম মোবিন জানান, গত বছর ১৫০০ এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের চারা লাগিয়ে শুরু করেন বিদেশি কাজু বাদামের চাষ।
তবে কাজু চারার পরিচর্যা সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় গত বছর লাগানো চারার মধ্যে ৪০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট চারাগুলোতে ফলনের আকার ও আকৃতি দেখে উৎসাহিত হয়ে ৮৫ একর জায়গায় এবছর আরও ৫ হাজার এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বান্দরবান সুয়ালক লম্বারাস্তা এলাকার কাজু বাদাম নার্সারি এএল এগ্রো লি. এর স্বত্বাধিকারী ইফতেখার সেলিম অগ্নি জানান, গত বছর ২০২১ থেকে বাণিজ্যিকভাবে এম-২৩ প্রজাতির চারা উৎপাদন শুরু করেন তিনি। সে সময় ৩ লাখ চারা উৎপাদন করে বিক্রয় করেন। চলতি বছর একই প্রজাতির উন্নতমানের ৯ লাখ বীজ হতে সাড়ে তিন লাখ চারা উৎপাদন করেছেন।
বান্দরবানে খুচরা বিক্রয়ের পাশাপাশি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নার্সারি ও বাগানীরা পাইকারি দরে এই চারা নিয়ে যাচ্ছে নার্সারি থেকে। এই মৌসুমে প্রায় দেড় লাখের বেশি চারা বিক্রয় হয়েছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, ২০২১ সালে জেলায় ১২৬.৭৪ হেক্টর জমিতে এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদামের চারার চাষ হয়েছে। চলতি বছর আরও অনেকেই এম-২৩ জাতের কাজু বাদামের আবাদ করছে। গতবছর যারা এই জাতের চারা লাগিয়েছিল এরই মধ্যে কিছু কিছু গাছ হতে ফলন পেতে শুরু হয়েছে। তবে পরিপূর্ণভাবে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে ৪ থেকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে চাষিদের।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, বান্দরবান সদর উপজেলায় ২০২১ সালে ৫ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে এম-২৩ কাজু বাদামের চাষ হয়েছিল। এবং ১০ হাজার এম-২৩ প্রজাতির কাজু বাদাম চারা বিতরণ করা হয়েছিল। বান্দরবানের মাটি কাজু চষের অনুকূল হওয়ায় ১ বছরের মধ্যেই বেশ কিছু চারাতে ফলন এসেছে।
খাবার উপযোগী দেশীয় কাজু বাদাম ২২০ থেকে ২৫০ পিস নাটে এক কেজি পক্ষান্তরে এম-২৩ ১২০ পিস কাজু নাটে এক কেজি হয়। ফলে দেশীয় কাজু বাদামের চেয়ে এটি আকারে বড় ও বিশ্ববাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বান্দরবানে উৎপাদিত এম-২৩ প্রজাতির এ কাজু বাদাম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কাজু বাদাম চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গতবছরে বিতরণকৃত চারার মধ্যে যে চারাগুলো নষ্ট হয়েছে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সে অনুযায়ী পুনরায় তাদেরকে চারা বিতরণ করা হচ্ছে।
নয়ন চক্রবর্তী/এমএমএফ/এমএস