নাগলিঙ্গম হতে পারে সুগন্ধি শিল্পের নতুন সম্ভাবনা
আমাদের দেশে দুর্লভ গাছ নাগলিঙ্গম। ফুলের গর্ভাশয় দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো বলেই এর এমন নামকরণ হয়েছে। তবে এর ফল দেখতে কামানের গোলার মতো হওয়ায় ইংরেজিতে নামকরণ হয়েছে ‘ক্যানন বল’।
ঔষধি বৃক্ষ হওয়ায় অনেক দেশে চাষ হলেও পৃথিবীতে এ গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। দুর্লভ এই গাছকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর বিস্তারে কাজ করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন।
উজ্জ্বল গোলাপি রঙের ফুল। পাপড়ি ছয়টি। দেখতে চমৎকার এই গাছ দেখলে মনে হবে কেউ বুঝি এই গাছের গুড়ি ছিদ্র করে ফুলগুলোকে গেঁথে দিয়েছে। প্রকাণ্ড এই বৃক্ষের পাতা লম্বা, ডগা সুঁচালো। শাখার সঙ্গে প্রায় লেগে থাকে। কাণ্ড ধূসর। সুন্দর ফুলের পাশাপাশি ফলের আকারও এই গাছের অন্যতম আকর্ষণ।
নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নাগলিঙ্গম ফুলের মিষ্টি গন্ধে রয়েছে মাদকতা। তবে এর ফুলের সৌরভ মন মাতালেও গাঢ় বাদামি রঙের ফলগুলো পেকে যখন খসে পড়ে, তখন সেগুলো পঁচে কটু গন্ধ ছড়ায়। তাছাড়া এই ফুল একদিকে যেমন ভেষজগুণ সম্পন্ন অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে সুগন্ধি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শেকৃবিসহ সারাদেশে হাতে গোনা মাত্র ৩০-৩৫টি নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে। বাংলাদেশে এ গাছের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেন, নাগলিঙ্গম আবিষ্কৃত হয় প্রায় তিন হাজার বছর আগে আমাজন জঙ্গলে। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়।
কিন্তু আমাদের দেশে এ গাছের বিস্তার কিভাবে সেটার সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে দেশে প্রায় ৭০-৮০ বছর আগে কোন এক সময়ে এই গাছগুলো লাগানে হয়েছিল। ফলে সবগুলো গাছের উচ্চতা ও বয়স প্রায় একই। বাংলাদেশে এর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। এরই মধ্যে শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে এবং গ্রিন বাংলাদেশ সোসাইটির সহযোগিতায় জনসাধারণের মধ্য আমরা বিনা মূল্যে ২০০টি চারা গাছ বিতরণ করেছি। তবে এর বিস্তারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সৌন্দর্যবর্ধক ও ভেষজগুণ সম্পন্ন এই গাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব একটু কম মনে করা হলেও এটিই হতে পারে বাংলাদেশের সুগন্ধি শিল্পের নতুন বাতিঘর, এমনটাই মনে করেন অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন।
তিনি জানান, নাগলিঙ্গমের মিষ্টি গন্ধ রয়েছে এবং এর স্থায়িত্বও অনেক বেশি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন ব্রাজিল, ইতালিতে সুগন্ধি তৈরিতে নাগলিঙ্গমের ফুল ব্যবহার করা হয়। এর বাকলের নির্যাস এন্টিবায়েটিক, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ঘামাচি পাউডার তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর এবং ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য পেটের পীড়ায় অত্যাধিক কার্যকরী। রোপণের ৭-৮ বছরের মধ্যে এই গাছের ফুল সুগন্ধি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। তাই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখনই যদি এই গাছের বিস্তারে উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এটি হতে পারে সুগন্ধি শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।
শেকৃবির শিক্ষার্থী এহসানুল হক বলেন, আমাদের দেশেরে বিভিন্ন স্কুল কলেজে অসংখ্য খালি জায়গা রয়েছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগলিঙ্গমের চারা বিতরণ করতে পারলে যেমন নাগলিঙ্গম বিস্তারের মাধ্যমে স্কুল কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে তেমনিভাবে এখান থেকে সুগন্ধি তৈরিও সম্ভব হবে বলে আশা করি।
এমএমএফ/জেআইএম