চাকরি ছেড়ে নার্সারিতে সফল রাজবাড়ীর জালাল
গাছের প্রতি নিখাদ ভালোবাসায় মাত্র ৪টি ক্যাকটাস দিয়ে ছাদ বাগান করা রাজবাড়ীর জালাল শিকদার এখন সফল একজন তরুণ উদ্যোক্তা। নার্সারি ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এনজিওর চাকরি ছেড়ে এখন তিনি পুরোপুরি এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। পাশাপাশি বাণিজ্যিক আকারে চলছে তার নার্সারি কার্যক্রম।
রোজ গার্ডেনসহ জালালের ৪টি বাগানে দেশি- বিদেশি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫ থেকে ৬ লাখ গাছের চারা রয়েছে। এছাড়া নার্সারিতে রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফুলের চারা।
নার্সারি থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি হয়। মাসে সকল খরচ খরচ বাদ দিয়ে জালাল শিকদারের আয় এখন আড়াই লক্ষাধিক টাকা। তার এমন সাফল্য দেখে এখন অনেকেই ঝুঁকছেন নতুন নতুন বাগান ও নার্সারি তৈরিতে।
রোজ গার্ডেন নার্সারিতে ব্যানানা, কিউজাই, পালমালসহ প্রায় ৫০ ধরনের আম, হরিমন ৯৯, আন্না, রেড, কাশ্মেরীসহ ৫ ধরনের আপেল, আঙুর, স্ট্রবেরি, থাইসহ ৮ থেকে ৯ ধরনের পেয়ারা, ফল্গুনি, বলসুন্দরী, কাশ্মেরী, আপেল কুলসহ ১০ ধরনের বড়ই, বেদানা, নারকেল, খেজুর, আঙুর, মালটাসহ প্রায় আড়াইশ ধরনের ফলের চারা রয়েছে। এছাড়াও তড়িৎ চন্ডাল, রাহু চন্ডালসহ প্রায় ২২ থেকে ২৩ প্রজাতির ঔষধিসহ ৭ থেকে ৮ প্রজাতির বনজ গাছের চারা রয়েছে।
অন্যদিকে নার্সারিতে কাঠ গোলাপ, নীলকণ্ঠ, গন্ধরাজ, বেলি, জুঁই, থাইল্যান্ড জবা, গোলাপসহ প্রায় ৩ শতাধিক প্রজাতির ফুলের চারাও রয়েছে।
অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি সাজানো এবং বাগান ও ছাদ বাগান তৈরিতে বিভিন্ন রকমের গাছের চারা কিনতে ক্রেতারা প্রতিনিয়তই ভিড় করছেন জেলা শহরের ভবানীপুরের রোজ গার্ডেন মিশ্র নার্সারিতে। প্রতিদিন শতশত ক্রেতা ও দর্শানার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় নার্সারি। এদিকে বাগানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন ২৫ থেকে ২৬ জন শ্রমিক।
নার্সারি পরিচর্যার শ্রমিকরা বলেন, তারা ২৫ থেকে ২৬ জন বাগান পরিচর্যা ও গাছের চারা রক্ষণাবেক্ষণ করেন। বাগানে কাজ করেই তাদের সংসার চলে। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন গাছের চারা কিনতে। আবার অনেকে পরিদর্শনের জন্য আসেন। সব ধরনের ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা এখানে রয়েছে।
ক্রেতারা বলেন, রোজ গার্ডেনে সব ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায় বলেই কিনতে আসেন। তবে দাম একটু বেশি।
উদ্যোক্তা জালাল শিকদার বলেন, তিনি ঢাকায় উদ্দীপন নামে এনজিওতে চাকরি করতেন। শৈশব থেকেই তার গাছের প্রতি ছিলো অপরিসীম ভালোবাসা। শখের বসে ২০১৩ সালে ঢাকার বাণিজ্য মেলা থেকে ৪টি ক্যাকটাস কিনে বাসার ছাদে রোপণ করেন।
একবছর পর সেখান থেকে ৩৫ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেন। এরপর আরও বেশি গাছের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। চাকরি থাকাকালে ২০১৬ সালের শেষের দিকে নিজ জেলা রাজবাড়ী মিজানপুরের গঙ্গাপ্রসাদপুরে ৪ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেন।
কিন্তু তখন মানুষের গাছের চারার প্রতি আগ্রহ দেখে রোজ গার্ডেনসহ ৪টি বাগান করেন। তখন থেকে বাগানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা সংগ্রহ করতে থাকেন। প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালে সফলতার মুখ দেখেন জালাল।
রোজ গার্ডেন থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল, ফলসহ অন্যান্য গাছের চারা বিক্রি শুরু করেন। নার্সারি লাভজনক হওয়ায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে এনজিওর চাকরি ছেড়ে পেশা হিসেবে বেছে নেন নার্সারির ব্যবসা। এখন ৭ একর জায়গার ওপর তার রোজ গার্ডেন মিশ্র নার্সারি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন সেখ বলেন, নার্সারি ব্যবসা লাভজনক। জেলায় ছোট-বড় ৪০টিরও বেশি নার্সারি আছে। পৌর এলাকায় জালালের নার্সারিসহ চন্দনী, আলীপুর, খানখানাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন বাগান ও নার্সারি তৈরি হচ্ছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে জালাল অন্যতম। অল্প সময়ে তিনি সফল নার্সারি মালিক হয়ে উঠেছেন। তার নার্সারিতে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব ধরনের ফুল, ফল, ঔষধি গাছের চারা তার নার্সারিতে পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তিনি ও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। জালালের দেখাদেখি এখন অনেকে নার্সারি ও বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
রুবেলুর রহমান/এমএমএফ/জেআইএম