রাবির ৮ শতাধিক গাছে এবার আম ধরেছে কম
আমের আদি রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী। আমের সঙ্গে মিশে আছে এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য। আম চাষের উপর নির্ভরশীল এখানকার কৃষকদের বড় একটি অংশ।
গত বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই মুকুলে ভরে গিয়েছিল এখানকার আম বাগানগুলো। তবে মার্চের শুরু থেকেই কিছুটা ব্যতিক্রমী হাওয়া বইছে বাগানগুলোতে। বড় কি ছোট সব গাছেই দেখা মিলছে শুধু নতুন পাতার কিন্তু তেমন একটা দেখা মিলছে না আমের গুটির। এ অবস্থায় আমের ফলন ভালো না হওয়ায় কৃষকদের মাথায় দুশ্চিন্তা ভর করেছে।
রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনে এগিয়ে বাঘা ও চারঘাট উপজেলা এবং তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম যেখানে প্রতিবছর প্রচুর আম উৎপাদিত হয়। তবে এবছর ক্যাম্পাসের আমগাছগুলোতেও দেখা মিলেছে বিপরীত চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রায় ৭টির মতো আম বাগান রয়েছে। বিনোদপুর গেট, প্রশাসন ভবনের পেছনে,পশ্চিমপাড়া, গোরস্থান, মমতাজ উদ্দিন এবং শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনের দুটি আর রাকসু ভবনের সামনের একটি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে রয়েছে ছোট বড় মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৮ শতাধিক আম গাছ । যেগুলোর প্রত্যেকটি গাছে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
কিন্তু এবছরের চিত্র উল্টো। ক্যাম্পাসের গুটি কয়েক আম গাছ ছাড়া অধিকাংশ গাছগুলোতে আমের মুকুলের দেখা মেলেনি। সকল গাছেই দেখা মিলছে শুধু নতুন পাতার। এমনও অধিকাংশ গাছ আছে যেগুলোর একটিতে আমের মুকুল ধরেনি। আবার যেগুলোতে ধরেছে তাও আবার অল্প পরিমাণে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল ) দুপুরে সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনের আম বাগান, জুবেরি ভবনের পাশের আম বাগান, ইবলিশ চত্বরের আম বাগানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ি ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৮ শতাধিক গাছে চোখে পড়ার মতো আমের মুকুল কিংবা আমের গুটির দেখা মেলেনি। সবগুলো গাছ মুকুল বিহীন শূন্য হয়ে পড়ে আছে। কিছু গাছ আবার শুকিয়ে মারাও যেতে দেখা গেছে।
এর কারণ হিসেবে রাবির কৃষি অনুষদের সিনিয়র অধ্যাপকগণ বলেছেন, বৈরি আবহাওয়ায় এবার গাছে গাছে মুকুলের চেয়ে নতুন পাতার সংখ্যা বেশি।
লোকসানের আবহ বুঝে পরিচর্যা করা থেকেও বিরত থাকছেন অনেকে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় আমের মুকুলের ক্ষতি করেছে। নতুন পাতার কারণে আম গাছে মুকুল তো নেই, যাও আছে তা বর্তমানে বৃষ্টি না থাকায় ঝরে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোননি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই এবছর আমের জন্য অফ সিজিন।
স্বভাবতই কোনো বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর গাছে আম কিছুটা কম আসে। তবে পরিচর্যার ক্ষেত্রে কৃষকদের জৈব সার ও রাসায়নিক সার দেওয়ার সময়টা পরিবর্তনের কথা বলছেন তিনি।
রাবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুর হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে আমরা বাইএনুয়াল বলে থাকি যা দুই বছরে ভাগ করা হয়ে থাকে।
এক বছর ভালো ফলন দিলে অন্য বছরে তা কমে যাবে এটা এদের জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্য। এবছর অফ ইয়ার চলছে যেকারণে আমের মুকুলে সংখ্যা খুবই কম। কিছুটা আবহাওয়া পরিবর্তন কারণেও এমনটা হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
মনির হোসেন মাহিন/এমএমএফ/এমএস