সহজে পুঁইশাক চাষ করবেন যেভাবে
আমাদের দেশে পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় শাক। দেশের প্রতিটি হাট-বাজারে প্রায় সারাবছরই পুঁইশাক পাওয়া যায়। সহজলভ্য হওয়ায় এই শাক সবার কাছে প্রিয়। অন্যদিকে এ শাকের পুষ্টিগুণও অনেক। সাধারণত সাদা ও লাল এই দুই ধরনের পুঁইশাক আমাদের দেশে পাওয়া যায়।
বলা হয়ে থাকে শাক জাতীয় তরকারির মধ্যে পুঁইশাক হলো সবার সেরা। পুঁইশাক খুব সুস্বাদু। আমাদের দেশে প্রায় সব স্থানেই পুঁইশাকের চাষ করা হয়। শহরের বাড়ির ছাদ কিংবা ব্যালকনিতেও খুব সহজে এর চাষ করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে পুঁইশাক চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
গরম, আর্দ্র আবহাওয়া ও রোদেলা স্থানে পুঁইশাক ভালো জন্মে। সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক চাষ করা যায়। তবে পুঁইশাক বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। তাই বাণিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষের ক্ষেত্রে দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
পুঁইশাকের দুটি জাত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে,- লাল পুঁইশাক। এর পাতা ও কাণ্ড লালচে রঙের। অন্য জাতের নাম সবুজ পুঁইশাক। এর পাতা ও কাণ্ড সবুজ।
জমির আগাছা পরিষ্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁইশাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
শুরুতে ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
গোবর ও টিএসপি সার অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।
পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হলো,- গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।
বর্ষায় সাধারণত সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে। পুঁই ক্ষেতের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়।
পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়া আরও কয়েক ধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে।
পুঁইশাকের ডগা লম্বা হতে শুরু করলেই ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ডগা কেটে সংগ্রহ করলে নতুন ডগা গজাবে। নতুন ডগা কয়েকবার কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি শতকে ১৩০-১৫০ কেজি পুঁইশাকের ফলন পাওয়া যায়।
এমএমএফ/জেআইএম