কুষ্টিয়ায় বিএডিসির নতুন ২০ জাতের আলু চাষ
কুষ্টিয়ায় প্রথমবারের মতো বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) রপ্তানি ও শিল্পের ব্যবহারের উপযোগী ২০টি নতুন জাতের আলুর চাষ করেছে। সদর উপজেলায় প্রায় দুই একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এসব জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে।
প্রচলিত জাতের চেয়ে দ্বিগুণ ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এসব জাতের আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিএডিসির এই উদ্যোগ দেশব্যাপী বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্তকর্তারা।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার দিনব্যাপী প্লট প্রদর্শনী ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাই এবং মাঠ দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিএডিসি কুষ্টিয়া অঞ্চলের যুগ্ম-পরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক।
কুষ্টিয়া বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ মৌসুমে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জগতি গ্রামে মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইয়ের লক্ষে প্রায় দুই একর জমিতে ২০টি নতুন জাতের আলুর প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে কুষ্টিয়া বিএডিসি হিমাগার।
মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে এসব জাতের আলুর চাষ করা হয়। জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে সানশাইন, প্রাডা, সান্তানা, এডিসন, কুইন এনি, ল্যাবেলাসহ আরো কয়েকটি জাত।
এসব আলুর ড্রাই ম্যাটার বেশি হওয়ায় রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী এবং রোগবালাই প্রতিরোধী। বিএডিসির তথ্যমতে বর্তমানে দেশে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে ১.৬ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে দেশের চাহিদা মেটাতে ৮০ লাখ মেট্রিক টন আলু ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট আলু রোগ বালাইয়ের কারণে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। এসব জাতের আলু চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বিএডিসি কুষ্টিয়া হিমাগারের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, প্রচলিত জাতের আলুর ফলন হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২২ টন। কিন্তু নতুন জাতের আলু ফলন ৪০ টনের বেশি। পুরাতন জাতের চেয়ে নতুন জাতের আলুর ফলন প্রায় দ্বিগুণ। একই খরচে অধিক ফলনের পাশাপাশি জমি কম ব্যবহার করা যাবে।
এই কর্মকর্তা মনে করেন, দেশে প্রচলিত পুরাতন জাতের পরিবর্তে বিএডিসির আমদানীকৃত নতুন জাতের আলুর বীজ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে আলু ফলন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক মাইলফলক অর্জিত হবে। এই লক্ষ্যে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে ও পরীক্ষামূলক চাষের ফলন দেখাতে এই মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্মপরিচালক মো. মোর্শেদুল ইসলাম এবং জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএডিসি কুষ্টিয়া হিমাগারের উপ-পরিচালক (আলু বীজ) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম।
অনুষ্ঠানে বিএডিসি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চুক্তিবদ্ধ বীজ আলু চাষি এবং বীজ ডিলারগণ উপস্থিত ছিলেন।
আল-মামুন সাগর/এমএমএফ/জেআইএম