আট মাসেই মিশ্র ফল চাষে শরিফুলের স্বপ্ন পূরণ
স্বপ্ন আর চেষ্টা থাকলে সফল হওয়া সম্ভব এ কথা আবারও প্রমাণ করলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার তরুণ শৌখিন চাষি শরিফুল ইসলাম। মাত্র আট মাসে বলসুন্দরী জাতের কুল বরই চাষ করে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। শুরুতে হতাশ হলেও সাফল্যে এখন তিনি ভীষণ আনন্দিত।
রাণীশংকৈল পৌর এলাকায় আট মাস আগে কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মাল্টা গাছের মাঝে মাঝে বলসুন্দরী জাতের কুলের চাষ শুরু করেন স্থানীয় শৌখিন চাষি শরিফুল ইসলাম। এক একর পঁচিশ শতক জমি তিনি ১০ বছরের জন্য লিজ নেন বছরে ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে।
শুরুতে স্থানীয় একজন চাষিকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেও সে চাষি তিন মাস পরে হতাশ হয়ে কুল বরই চাষ ছেড়ে চলে যান। তবুও হাল ছাড়েননি শরিফুল। আবারও অন্য একজন নতুন চাষিকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা শুরু হয় শরিফুলের। তবে এবার হতাশা নয় বরং সাফল্য উঁকি দিচ্ছে তাদের সামনে। আড়াই লাখ টাকা খরচ করা বাগানে এবছরেই আসলসহ আরও ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
শরিফুলের কুল বরই চাষের কার্যক্রম দেখে স্থানীয়রা প্রথমে হাসাহাসি করলেও বর্তমানে কুল চাষের পরামর্শ নিতে আসছেন তার কাছে। তার বাগানে অন্য জেলা থেকে আসা কুল ক্রেতা প্রতি কেজি কুল ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে চাইলেও তাদের কাছে কুল বিক্রি করছেন না শরিফুল।
বরং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কুল চাষি শরিফুলের দাবি আট মাসে সফলতা পেয়েছি। স্থানীয়দের কম দামে দেব। কারণ বেশি দামে অন্যদের দিলে স্থানীয়রা খেতে পারবেন না। এ কারণেই বেশি দাম হলেও অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে কুল বিক্রি করছেন না শরিফুল।
তরুণ শৌখিন চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শখ জাগে কুল বাগান করার। তারপরে ইউটিউবে কুল চাষের পদ্ধতি দেখি। এক পর্যায়ে উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কৃষি বিভাগ আমাকে মাল্টার সঙ্গে বলসুন্দরী জাতের কুল চাষের পরামর্শ দেয়।
মাল্টার চারাও সরবরাহ করে কৃষি বিভাগ। এক একর ২৫ শতক জমি বছরে ৪৫ হাজার টাকা লিজ নিয়ে বলসুন্দরী জাতের কুলের চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করি। মাত্র আট মাসে আমার গাছে চাহিদা অনুযায়ী ফল এসেছে। এরই মধ্যে বাজারজাতও শুরু করেছি। লাভের আশাও করছি।
রাণীশংকৈল উপজেলার ফল ব্যবসায়ী ইব্রাহীম বলেন, শরিফুলের কুল এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। স্বাদ ও মান অনেক ভালো। তবে ঠান্ডার কারণে বাজারে কুলের চাহিদা কিছুটা কম। আশা করছি ঠান্ডা কমলে বাজারে কুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে আর বেশি দামে কুল বিক্রি হবে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, মিশ্র বাগান করে সফল শরিফুল ইসলাম। মাল্টার সঙ্গে বলসুন্দরী জাতের কুল রয়েছে তার বাগানে। বলসুন্দরী জাতের কুল দেখতে খুব সুন্দর। খাওয়ার জন্যও বেশ ভালো।
ঠাকুরগাঁওয়ে এই রকম কুল বাগান আর নেই। এক একর ২৫ শতক জমিতে বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা রয়েছে শরিফুলের। বাগানটি দেখে স্থানীয় কিছু চাষি কুল বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আশা করি আগামীতে উৎপাদিত বলসুন্দরী জাতের কুল আর অন্য জেলা থেকে আনার প্রয়োজন হবে না। বরং এ জেলার কুল অন্য জেলায় যাবে।
তানভীর হামান তানু/এমএমএফ/জেআইএম