ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

মাশরুম চাষে স্বপ্ন বুনছেন মেহেরুন নেছা

বিরামপুর (দিনাজপুর) | প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো মেহেরুন নেছা নামের এক নারী উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। এটি চাষের সফলতায় অল্পদিনের মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্যোক্তা মেহেরুন নেছার বাড়ি বিরামপুর পৌরশহরের মির্জাপুর এলাকায়। তার স্বামীর নাম মো. জামিনুল ইসলাম সুমন। চার মাস আগে নিজ বাড়িতে পরিত্যক্ত তিনটি ঘরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মাশরুম চাষ। অল্পকয়েক দিনের মধ্যে তার মাশরুম চাষ এলাকায় সাড়া পড়ে যায়। এরই মধ্যে তার মাশরুম বিরামপুর উপজেলাসহ আশপাশের বেশ কিছু উপজেলায় অনলাইনে বিক্রয় শুরু করেছেন। তার মাশরুম প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ফোর এস এগ্রো লিমিটেড।

মাশরুম চাষ প্রকল্পের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চার মাস আগে গত বছর নভেম্বর মাসে জেলা হর্টিকালচারাল অফিস থেকে ১০ হাজার টাকায় ১৮৩টি মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে এনে সাড়ে ৪০০ পিচ সিলিন্ডার তৈরি করে মাশরুম চাষ শুরু করেন মেহেরুন। বর্তমানে ওই প্রকল্প থেকে গড়ে সপ্তাহে ১২ কেজি মাশরুম উৎপন্ন করা হয়। প্রতিকেজি মাশরুম কাঁচা ২০০ টাকা, শুকনো ১৫০০ এবং গুঁড়া মাশরুম ৩ হাজার টাকা কেজি বিক্রয় করা হয়।

সরেজমিনে সম্প্রতি ওই প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা শহরের মির্জাপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে টিনসেড একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে তিনটি কক্ষে সারি সারি ভারে ঝুলানো আছে মাশরুমের উপকরণ। মাশরুম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পলিথিনে বাঁধানো খড়ের ভেতর মাদার মাশরুম ও হাইগ্রোমিটার স্পেয়ার। দড়ি, বদ্ধ ঘর, রাবার ও ব্যান্ড ছাড়াও মাশরুম চাষের জন্য তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ২০-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শুধু মাশরুম নয়, মেহেরুন নেছা তার ওই প্রকল্পের পাশাপাশি করেছেন কবুতরের খামার। তার খামারে লাল, কালো মুক্ষী, ঘিয়াচুলি ভারতীয়, গিরি বাজ ঢাকা, রাজশাহী ও কাগজি গিরিবাজ কবুতর আছে। এছাড়াও মাক্সি ও সবজি জাতের রেসার কবুতর আছে। ওই খামারে অন্য একটি কক্ষে আছে ২০০ দেশীয় মুরগি।

Marun-(2).jpg

জানতে চাইলে নারী উদ্যোক্তা মেহেরুন নেছা বলেন, আমার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তার সহযোগিতায় আমার বসতবাড়ি মির্জাপুর গ্রামে অনেকটা শখেরবশেই কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়া ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হই। এখন এতে আমার স্বামী ও ছেলে সহযোগিতা করছে।

দিনাজপুর হর্টিকালচারাল থেকে ১০ হাজার টাকায় ১৮৩টি মাশরুমের মাদার বীজ সংগ্রহ করে প্রাথমিক চাষ শুরু করে দেই। অল্প দিনের মধ্যে সেখান থেকে মাশরুম উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমানে মাশরুমের চাহিদা বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রতিমাসে প্রায় ৫০ কেজির মতো মাশরুম উত্তোলন হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে এখন ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিকেজি মাশরুম উৎপাদন করতে খরচ হয় মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আর কাঁচা ২০০, শুকনো ১৫০০ এবং গুঁড়া ৩ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিরামপুরে মাশরুমের চাহিদা কম, বিরামপুর শহর ছাড়াও ফুলবাড়ি, ঘোড়াঘাট ও ঢাকায় যাচ্ছে মাশরুম। মাশরুম সম্পূর্ণ হালাল, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন সবজি যা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় ।

মাশরুমের পাশাপাশি আমার এই প্রকল্পে আছে দেশীয় মুরগি পালন ও বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর চাষ। মুরগি ও কবুতরকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন মুরগিগুলোকে সবজি খাওয়ানো হয়।

মাশরুমের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা মনে করতাম এটা ব্যাঙের ছাতা। এর মধ্যে এতো পুষ্টি আছে আগে জানতাম না। আমরা কিনে নিয়ে বাড়িতে চপ তৈরি করি। বেশ ভালো লাগে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিক্সন চন্দ্রপাল জানান, মাশরুম চাষে জায়গা অনেক কম লাগে। সময় কম লাগে এটাতে বেশ লাভজনক। মাশরুম একটি ঔষধি এবং সুস্বাদু সবজি। এটা চাষে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

মো.মাহাবুর রহমান/এমএমফ/এমএস

আরও পড়ুন