যমুনার চরাঞ্চলে গমের বাম্পার ফলন
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর চরাঞ্চলে আমন ধান, সরিষা ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের পর এবার গমের ব্যাপক ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। চরাঞ্চলের কৃষক-কৃষাণীরা এখন গম কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এবছর আশাতীত ফলন হওয়ায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।
এদিকে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলে যমুনা নদীর চরেও গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। নদী ভাঙা তিন সহস্রাধিক মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে গম চাষ করে। চলতি মৌসুমে যমুনা নদীর চরে ব্যাপক পরিসরে হয়েছে গমের চাষ।
গম চাষ করে কৃষকদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। বর্ষা মৌসুমে রাক্ষুসী নদী বসতভিটা কেড়ে নিলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল তাদের মনে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। চরের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু ফসল আর ফসল। বিভিন্ন ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে চরাঞ্চলের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। ফাল্গুনের শেষে ও চৈত্র মাসের প্রথম দিকে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়। যদিও চরের অনেক জায়গায় এরই মধ্যে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে।
গমের বীজ বপনের পর খুব বেশি সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মতো জৈব সার ও চারা বড় হওয়ার কিছুদিন পরেই মাটির উপরে অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে গম চাষে খরচ হয় কম লাভবান হন কৃষক-কৃষাণীরা।
জানা যায়, নদীপাড়ের মানুষের আর্শিবাদও যমুনা। যমুনা যেমন প্রতি বছর ঘর-বাড়ি গ্রাস করছে তেমনি পলি জমিয়ে জেগে ওঠা চরে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। তাই তো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুষ শেষে যমুনা আর্শিবাদ হয়ে দেখা দেয় নদী পাড়ের মানুষের জীবনে। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
যমুনা নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে চরের পরিধি দিনদিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর চরাঞ্চলে এবছর ব্যাপক হারে গম চাষ করেছেন কৃষকরা।
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং মূলধন পেলে গম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে কৃষকদের দাবি। চলতি বছর নদীপাড়ের কৃষকরা ব্যাপক হারে গমের আবাদ করেছেন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা লোকসান পোষাতে মৌসুমের শুরুতেই আটঘাট বেঁধে চরের জমিতে নিরলসভাবে শ্রম ব্যয় করেন। কৃষকের ঘামে আর শ্রমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
যমুনা নদীর চৌহালী উপজেলার আজিমুদ্দির মোড় এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম, খায়রুল আলম, রহিজ উদ্দিন জানান, গত ৭ থেকে ৮ বছর আগে যমুনা নদী তাদের বাড়ি ঘর গ্রাস করেছে। নদী তাদের সর্বশান্ত করলেও গত ৫ বছর ধরে ঐ স্থানে চর জেগে ওঠায় সেখানে তারা এবার ৩ বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছেন।
বাউশা চরের কৃষক আবুল হোসেন ও বাবলু হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমে চরের জমি পানিতে ডুবে থাকে। তখন আমাদের অলস থাকতে হয়। চর থেকে পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে এখানকার কৃষকরা গমের আবাদ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে গম ঘরে তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়া গেলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
উমারপুর চরের নৌকার মাঝি আব্দুল ছামাদ মুন্সী জানান, চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। চরাঞ্চলের জমিতে ধান, টমেটো, গম, পাট, ডাল, সবজি, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন ও তিলসহ বিভিন্ন জাতের ফসল ফলিয়ে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে অনেক কৃষক-কৃষাণীর ঘরে শান্তি এসেছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আহসান শহীদ সরকার জানান, এবছর যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সিরাজগঞ্জে এবছর ৫১০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। জেলায় যমুনা নদীর চরেই সবচেয়ে বেশি গম চাষ হয়ে থাকে।
এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্ষা মৌসুমে চরগুলো পানিতে ডুবে থাকে। পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ডুবে যাওয়া চরের জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমাণ কম লাগে। এজন্য যমুনার চরে গম চাষে বেশি খরচ হয় না। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
এমএমএফ/এমএস