টমেটোর ব্যাপক ফলনেও চিন্তিত রাজবাড়ীর কৃষকরা
এবছর আবহাওয়া অনুকূল ও চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টির প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে রাজবাড়ীর টমেটো চাষিরা। ফলে জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
এদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে টমেটোতে কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। ফলে পুনরায় ক্ষেতে কীটনাষক প্রয়োগ করছেন চাষিরা। এতে বেড়ে যাচ্ছে খরচ। এছাড়া বাজারে টমেটোর দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় শঙ্কায় চাষিরা।
পদ্মাবিধৌত জেলা রাজবাড়ীর নদী তীরবর্তী চর ও নিচু অঞ্চলের টমেটোর আবাদ বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেলার সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় বেশি টমেটোর আবাদ হয়। আগাম আবাদ করা চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। এবং বর্তমানেও পাচ্ছেন। জেলার উৎপাদিত এই টমেটো ব্যাপারিদের মাধ্যমে রাজবাড়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রপ্তানি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাষক প্রয়োগ, বীজ বপন, চারা রোপণ ও শ্রমিকের মজুরিসহ কৃষকের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণেরও বেশি। এবং ভালো ফলন হলে বিঘায় দেড় থেকে ২০০ মণ টমেটো বিক্রি করেন কৃষক।
তবে এবার বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি ও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর রাজবাড়ীতে ৭২২ হেক্টর জমিতে টমোটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দতে।
এবছর রাজবাড়ী সদরে সদর ২৪৬, গোয়ালন্দে ৩৫৭, পাংশায় ৭৫, কালুখালীতে ৩৫ ও বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ীতে বিউটিফুল, বিপুল প্লাস, বিগল ও মিন্টু সুপার এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার উড়াকান্দার গোপলবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে রয়েছে টমেটোর ক্ষেত। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কাঁচা-পাকা টমেটো। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে অনেক টমেটোতে পচন ও কালচে দাগ দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা ক্ষেত থেকে পচা টমেটো ফেলে গাছ থেকে পাকা টমেটো ছিড়ে ঝুঁড়িতে রাখছেন। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরাও টমোটো তোলার কাজ করছে। এরপর সেই টমোটোর ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মাঠ থেকে অধা কিলোমিটার দূরে বস্তায় ভরছেন। পরে সেখান থেকে ভ্যানে করে জেলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে এই টমেটো।
চাষি হাবিবুর রহমান, কাশেম মন্ডল, করম আলী শেখ, হারেজ আলী শেখ ও রিয়াদ বলেন, টমেটো লাভজনক ফসল। তারা প্রতিবছর টমেটোর আবাদ করেন। বৃষ্টির কারণে এবার টমেটো কালচে দাগ পড়েছে।
যার কারণে অনেক টমটোতে পচন ধরছে। আর বাজারেও এখন টমেটোর দাম কম। তবে এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম অবস্থায় ভালো দামও পেয়েছেন। কিন্তু কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে টমেতো দাগ পড়েছে। ফলে যে পরিমাণ লাভের আশা করেছিলেন, তা হবে না।
তারা আরও বলেন, নিজের জমি হলে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর জমি লিজ দিয়ে আবাদ করলে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ। এখন ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এভাবে বাজার থাকলে তারা কিছুটা লাভবান হবেন। কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে টমেটোতে পচন ও দাগ ধরেছে। যার কারণে এখন নতুন করে কীটনাষক দিতে হচ্ছে। ফলে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আর এখন বাজারও কমে গেছে। ফলন ভালো হলে বিঘায় এক থেকে ১৫০ মণ টমেটো হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন সেখ বলেন, এবছর জেলায় টমেটো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে তাদের পরামর্শে ছত্রাকনাষক ও কীটনাষক প্রয়োগে চাষিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবং কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন।
রুবেলুর রহমান/এমএমএফ/এমএস