শস্য শুকানোর আইডিয়া দিয়ে প্রথম হলেন শামসুজ্জামান
ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পর তা শুকানো কৃষকদের জন্য যে ভীষণ জরুরি। প্রান্তিক পর্যায়ের প্রত্যেক কৃষক তা উপলব্ধি করতে পারেন। চাতালে বা গতানুগতিক পদ্ধতিতে এই শস্য শুকাতে কৃষকদের বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়। এছাড়াও সাধারণভাবে শস্য শুকানো অনেক সময়সাপেক্ষ হওয়া ছাড়াও বৈরি আবহাওয়ায় কৃষকদের জন্য তা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
আর এই সমস্যা সমাধানে কৃষি প্রযুক্তিতে খুব অল্প খরচে শস্য শুকানোর মেশিন ‘ড্রায়ার’ এর আইডিয়া উপস্থাপন করে ‘কৃষি প্রকৌশল উদ্ভাবন প্রতিযোগিতা-২০২১’ এ প্রথম স্থান অর্জন করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ১৭তম ব্যাচের এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান ও তার দল।
রাজধানীর একটি হোটেলে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় দীর্ঘ ৯ মাস যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা শেষে ২০টি দল থেকে ৩টি দলকে বিজয়ী করা হয়। এতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আমিরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার ও তার দল।
প্রতিযোগিতায় শস্য শুকানোর ‘ড্রায়ার’ বানানোর আইডিয়া উপস্থাপন করে প্রথম স্থান অর্জন করেন হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান ও তার দল। তার প্রস্তাবিত ‘ড্রায়ার’ অনেক ছোট, সুলভ মূল্য এবং কৃষকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় তা বিচারকদের দৃষ্টি কাড়ে।
‘ডিজাইন অফ এ সারকুলার টাইপ ক্রস ফ্লো ড্রায়ার ফর লো অ্যান্ড হাই ময়েশ্চার গ্রেইন’ প্রজেক্ট টাইটেলে শামসুজ্জামানের শস্য শুকানোর ‘ড্রায়ার’ মেশিন আইডিয়ার মেন্টর ছিলেন হাবিপ্রবির এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দিন সরকার। আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ শামসুজ্জামানের প্রস্তাবিত এই ‘ড্রায়ার’ বাস্তায়নে অর্থায়ন করবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অনুভূতি জানিয়ে শামসুজ্জামান বলেন, ‘আয়োজকরা কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছিলো যেগুলোর উপর আমাদের আইডিয়া জমা দিতে হয়েছে। এজন্য আমি শস্য শুকানোর ‘ড্রায়ার’ বানানোর আইডিয়া দেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারে চিন্তা করি। আমাদের দেশে বড় বড় মিল পর্যায়ে ড্রায়ার থাকলেও ছোট পর্যায়ে কোনো ড্রায়ার নেই যেটি কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করা যাবে।
যদিও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ড্রায়ার ডেভেলপ করা হলেও সেগুলোতে কিছু সমস্যা আছে, আর সেটি হলো ‘ইউনিফর্ম ড্রায়িং প্রবলেম’। তাদের ড্রায়ারে ‘গ্রেইন কন্টিনিউস’ চলাচল না করার কারণে ‘ইউনিফর্ম ড্রায়িং’টা আসলে সেভাবে হয় না। আর সেটিই ছিল আমার মূল লক্ষ্য যে কিভাবে শস্য শুকানোর জন্য একটি কার্যকর ‘ড্রায়ার’ বানানো যায়। যেটি হবে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী।
আর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমার প্রস্তাবিত ড্রায়ারটি ছোট এবং সুলভ মূল্যে রাখা। এজন্য আমি ড্রায়ারটির ডিজাইন করার পর নিকটস্থ ওয়ার্কশপে যখন দেখালাম, তখন তারা বললো ১,৫০,০০০ টাকার মধ্যেই এই ড্রায়ার বানানো সম্ভব। যা কৃষকদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী। এরপর আমি আমাদের বিভাগের প্রফেসর ডক্টর মো. কামাল উদ্দিন সরকার স্যারের সাথে কথা বলে আইডিয়া ডেভেলপ করি এবং প্রতিযোগিতায় পাঠিয়ে দেই। বিচারকরা যাচাই-বাছাই শেষে ১০ জনকে নির্বাচন করে প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য। প্রেজেন্টেশনের পর তারা তিনটি আইডিয়া নির্বাচন করেন। বিজয়ী হিসেবে যেখানে আমার আইডিয়া প্রথম হয়।
এ ব্যাপারে শামসুজ্জামান ও তার দলের প্রস্তাবিত ‘ড্রায়ার’ আইডিয়ার মেন্টর হাবিপ্রবির এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দিন সরকার বলেন, এই ড্রায়ারটি যদি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয় তাহলে এটি হবে কৃষকদের জন্য একটি ‘লো কস্ট টেকনোলজি’। সাধারণত এমন স্বল্প মূল্যের ‘ড্রায়ার’ এর প্রচলন বাংলাদেশে এখনো হয়নি। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এই ড্রায়ার কৃষকদের জন্য সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিযোগিতায় এটি প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
এমন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলিমুল হাসান চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে তরুণ কৃষি প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট গবেষকদের উৎসাহ দিতে এমন আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের সমসাময়িক কৃষি প্রকৌশল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান অন্বেষণ ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতেই এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, গত মাসের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিকরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. হামিদুল ইসলাম।
অলংকার গুপ্তা/এমএমএফ/জেআইএম