উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতে স্থানান্তর করা যাবে এ জিন
প্রথমবারের মতো দেশে ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য উদ্ঘাটন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল গবেষক। লবণাক্ততা ও বন্যা সহিষ্ণু বিনা ধান ২৩-এর ওপর গবেষণা করে এ সাফল্য পেয়েছেন তারা। উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতে এ জিন স্থানান্তর করা যাবে বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউটে সেমিনার হলে ধানের এ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, বিনার প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম ও পিএইচডি শিক্ষার্থী মানস কান্তি শাহা।
ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলোতে বিভিন্ন রেডিয়েশন প্রয়োগের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা হয়। তবে এ রেডিয়েশনের প্রভাবে জিনের কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা আগে জানা সম্ভব হতো না। আমাদের এ উদ্ভাবনের ফলে এখন থেকে যে কোনো ধানের জাতের জিন পর্যায়ে কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।’
গবেষণা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান-২৩ একটি লবণাক্ত ও বন্যা সহিষ্ণু ধানের জাত। ২০১৯ সালে বাকৃবি ও বিনার গবেষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় বিনাধান-২৩ ও তা থেকে উৎপন্ন তিনটি মিউটেন্ট (রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত জাত) ধানের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়। যা বাংলাদেশে প্রথম। এ জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের ফলে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ওই ধানের জাতে আমরা প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু ২৩টি জিন, উচ্চ ফলনশীল বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ১৬টি জিন এবং চালের আকার-আকৃতির জন্য দায়ী চারটি জিন শনাক্ত করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে ধানের শনাক্তকৃত জিনগুলো পরে দেশী-বিদেশি বিজ্ঞানীরা রেফারেন্স জিনোম হিসেবে ব্যবহার এবং ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতে স্থানান্তর করতে পারবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত এ মানুষগুলোর খাদ্য চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত ফসলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কেবল সবার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিনা ও বাকৃবির সমন্বয়ে উদ্ভাবিত ধানের এ জিনোম সিকোয়েন্সের ফলে লবণাক্ত ও হাওড় এলাকায় ধানের উৎপাদন আরও বাড়বে। গবেষণাটিকে যাতে দ্রুত মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে।’
মঞ্জুরুল ইসলাম/আরএইচ/জেআইএম