তরমুজের ভালো ফলন পেয়েও ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে মৌসুম ছাড়া বারি-১ ও বারি-২ জাতের উদ্ভাবিত তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে কুমিরমারা গ্রামের তিন তরমুজ চাষি। সরল জমিতে তৈরি করেন মাচা। সেই মাচায় এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বিভিন্ন কালারের তরমুজ। তরমুজগুলো ঢেকে দিয়েছেন নেটের ব্যাগ দিয়ে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিন্সটিটিউটের প্রাথমিক প্রদর্শনী উৎপাদন হিসেবে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে এই প্রথম জাকির গাজী, ওমর ফারুক ও হান্নান গাজী নামে তিন কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে মৌসুমী তরমুজ চাষ শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের জমিতে ছোট ছোট মাচায় ঝুলছে নানান আকৃতির তরমুজ। বিভিন্ন পেশা থেকে ফিরে এসে তরমুজ চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তারা।
দেশে সচরাচর গ্রীষ্মকালে তরমুজের ব্যাপক আবাদ হলেও দেশে প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজের আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছে তবে তাদের সেই ফলন পরিপক্বতা পাওয়ার আগেই অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা হয়ে তরমুজের গাছগুলো মরে যাচ্ছে।
কুমিরমারা গ্রামের তরমুজ চাষি ওমর ফারুক জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের সহযোগিতায় এই প্রথম আমি ৬৬ শতাংশ জমিতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করি।
শুরু থেকে গাছের বেড়ে ওঠা, ফল ধারণ ও ফলের বেড়ে উঠা সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। অল্পকিছু স্থানের তরমুজের অপরিপক্কতা আসলেও ৯০ শতাংশ তরমুজের বয়স মাত্র ২১ দিন তার মধ্যেই গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছগুলো মরতে শুরু করেছে।
তরমুজ চাষি জাকির গাজী জানান, আমরা নীলগঞ্জের চাষিরা এই প্রথম প্রায় একশ শতাংশ জমিতে মৌসুম ছাড়া তরমুজ চাষ করি। আমাদের এই ইউনিয়নে সর্বমোট ১২টি স্লুইস গেট রয়েছে কিন্তু তার মধ্যে ৮ টি স্লুইসের গেট নষ্ট তাই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এই নিয়ে আমরা কৃষকরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি গেটগুলো সংস্কার করার জন্য কিন্তু কেউ দৃষ্টিপাত করে না। এইবার আমরা কমপক্ষে আট-দশ লাখ টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি করতে পারতাম কিন্তু এখন খরচও উঠবে না।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই তাদেরকে তদারকি করে আসছি, তরমুজ গাছগুলো ছোট থাকলে এই জলাবদ্ধতায় কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন তরমুজের বয়স ২১-২২ দিন, এই মুহূর্তে তরমুজগুলো অপরিপক্ক তাই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন মাহমুদ জাগো নিউজকে জানান, একদিকে অতিবৃষ্টি অন্যদিকে স্লুইস গেটের সমস্যা যার কারণে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। স্লুইস গেটগুলোকে সংস্করণ করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ঠিক করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার উপরে চীন, জাপান, থ্যাইল্যান্ড ও ভারত থেকে তরমুজের বীজ আনতে হয়।
আমরা এই বীজগুলো দেশে উৎপাদন করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে গবেষণা শুরু করি। ২০২০ সালের জুলাই মাসে এগুলো অবমুক্ত করতে সক্ষম হই, এই বছরও জেলার বেশ কিছু স্থানে আমরা নিজেরা মৌসুম ছাড়া তরমুজের বীজ থেকে চারা করি। পরে চারাগুলোকে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেই।
জেলার অনেক জায়গায়ই আমরা এই মালচিং পদ্ধতির মৌসুমী তরমুজের সফলতা পেয়েছি কিন্তু নীলগঞ্জে জলাবদ্ধতা থাকায় কুমিরমারায় যে প্রদর্শনীটা রয়েছে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তার রয়েছি।
আসাদুজ্জামান মিরাজ /এমএমএফ/এমএস