ঠাকুরগাঁওয়ে সূর্যাপুরী আমের কেজি ১০ টাকা
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী সূর্যাপুরী আমের বাজারে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে জেলার আম ব্যবসায়ীরা।
মাটি এবং আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্য কোথাও এ আম হয় না বলেই দেশজুড়ে এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তাই জেলায় আমের বাজারের বড় অংশজুড়েই এই সূর্যাপুরী আমের রাজত্ব।
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় বাজারগুলোতে এবার সূর্যাপুরী পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে। আর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। করোনার প্রভাবে বাজারে ক্রেতা কম আসা এবং অন্য জেলাগুলো থেকে পাইকারি ক্রেতাদের আম ক্রয়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারের এমন বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ।
ইতিমধ্যেই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কালিবাড়ি বাজার, কালেক্টরেট চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সত্যপীর ব্রীজ, গোধূলী বাজার, সেনুয়া হাট, খোচাবাড়ী হাট, লাহিড়ী হাট, স্কুলহাট, কুশালডাঙ্গী, হলদিবাড়ীসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আমের ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে বসে থাকলেও বাজারে ক্রেতা নেই। দু-একজন স্থানীয় ক্রেতা থাকলেও বহিরাগত ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বাজারে সূর্যাপুরী আম প্রতিমণ কাঁচা বিক্রি হচ্ছে ছয়শত থেকে আটশত টাকা, আম্রপালি সাতশত টাকা, হিমসাগর এক হাজার চারশত টাকা, লখনা আমের প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে চারশত টাকা, ল্যাংড়া আমের প্রতিমণ ছয়শত টাকা। কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের মূল্য অর্ধেকের চেয়ে আরও কম।
গত বছর বাজারে সূর্যাপুরী আম ৫০-১০০ টাকা কেজি, আম্রপালি ৭০-১০০ টাকা কেজি, হাড়িভাটা ৮০-১২০ টাকা, ল্যাংড়া ৯০-১৩০ টাকা, হিমসাগর ৮০-১৫০ টাকা, আশ্বিনা ৫০-১০০ টাকা এবং বাড়ি-৪ আম ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে করোনার প্রভাবে এবার এসব আমের দাম কমেছে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ।
বালিয়াডাঙ্গী বাজারে আম কিনতে আসা রাকিব হাসান ৪ মণ আম কিনেছেন তিন হাজার দুইশত টাকা দিয়ে। তিনি জানান, আমের দাম কম শুনে ঠাকুরগাঁও থেকে সকালেই এসেছি আম কিনতে। ভালোমানের আম কিনলাম বেশ কম দামেই।
আম ব্যবসায়ী লতিফ, কামাল ও আযাদ জানান, আমের বাজারে ক্রেতার আগমন নেই। তাই আমের দাম অনেক কম। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকে আম কিনতে কেউ আসছেন না। বিক্রি না হয়ে পাকা আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৪ শত ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্যাপুরী, আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, বাড়ি-৪ সহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুর্যপুরী ও আম্রপালি আমের বাগান বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গত ৩ বছর ধরে আম বিক্রি করছেন হিমেল তিগ্যা, আশিক, সাকিব নামের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে তেমন সাড়া নেই। দাম কম হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রত্যেকে ২০ মণ আমের অর্ডার পায়নি। গত বছর প্রায় দুইশত মণ আম বিক্রি করেছি অনলাইন প্লার্টফমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যাপূরী আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকে না এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। জেলায় আমের ভালোই ফলন হয়েছে। করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
জেলার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ চলছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। তাই জনস্বার্থেই এই কঠোরতা। আম বিক্রিতে অনলাইন প্লাটফর্ম এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া ছাড়া এই মুহূর্তে কোনো কিছু বলার নেই। যদি তারা কারিগরি সহায়তা চান, আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পরামর্শ প্রদান করা হবে।
তানভীর হাসান তানু/এমএমএফ/এমএস