বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
তেঁতুলের নাম শোনা মাত্রই জিহ্বায় জল এসে যায়। তেঁতুলে আসক্তি নেই এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। টক-মিষ্টি স্বাদের তেঁতুলের আচার বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একটা সময় গাছ তলায় পড়ে থাকলেও কেউ তেঁতুল ধরে দেখতো না। সেই তেঁতুল এখন পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
আম, কাঁঠাল, কলা, বেল, আদা ও হলুদের সাথে পাল্লা দিয়ে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে জায়গা করে নিয়েছে তেঁতুল। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে জমে উঠেছে তেঁতুল বেচা-কেনা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে খাগড়াছড়ির তেঁতুল। ঢাকা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তেঁতুল ব্যাবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হাট-বাজার।
সম্প্রতি পার্বত্য খাগড়াছড়ির কলা-কাঁঠালসহ কৃষিপণ্যের মাদার মার্কেট বলে খ্যাত গুইমারা বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মঙ্গলবার হাটবারে ভোর থেকেই স্থানীয়রা তেঁতুল নিয়ে বাজারে আসে।
সকাল ৯টার মধ্যেই এসব তেঁতুল কৃষক বা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাত বদল করে চলে যায় ঢাকা, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তেঁতুল ব্যাবসায়ীদের হাতে। তেঁতুল কিনে নেয়ার পরে খোসাবিহীন ও খোসাসহ তেঁতুল আলাদা আলাদা কার্টুনে প্যাকেটিং করা হয় বাজারেই। জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫/৩০ মেট্রিক টন তেঁতুল বিক্রি হয় গুইমারা বাজারে।
একসময় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে ১০-১৫ টাকা দরে প্রতি কেজি তেঁতুল বিক্রি হলেও সমতলের বিভিন্ন জেলায় তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন সেই টক-মিষ্টি তেঁতুল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। কোন ধরনের কীটনাশক বা পরিচর্চা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তেঁতুল চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।
গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে গুইমারা বাজার থেকে ঢাকায় তেঁতুল নিয়ে যান ব্যবসায়ী মো. নবী হোসেন। তিনি বলেন, দিন দিন ঢাকাসহ আশেপাশের জেলায় খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তেঁতুলের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে দামও বেড়ে গেছে।
দেশের আচার তৈরির কারখানা গুলোতেও খাগড়াছড়ির তেঁতুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে নরসিংদী থেকে আসা পাইকার মো. আমির হোসেন বলেন, নরসিংদীতে পাহাড়ি তেঁতুলের চাহিদা ব্যাপক। তেঁতুলে কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় না। ফলে এর গুণগত মান ঠিক থাকে।
স্থানীয় বাজারে তেঁতুলের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি গুইমারার হাফছড়ির তুছাপ্রু মারমা বলেন, কোন ধরনের বিনিয়োগ বা ঝুঁকি ছাড়াই তেঁতুল বিক্রি করে আমার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।
শুধু তুছাপ্রু মারমা নয়, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেঁতুল বিক্রি করে সংসারের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়েছেন গুইমারা বড়পিলাকের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই। তিনি বলেন, তেঁতুলে লোকসান হয় না বলে তেঁতুলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হতো বলে ভালো দাম পাওয়া যেত না। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী ব্যাবসায়ী আসার কারণে তেঁতুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় বিক্রেতা সুনুইপ্রু মারমা বলেন, এক সময় তেঁতুল নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন আর বসে থাকতে হয় না। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। বালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি ক্রেতার জন্য অপেক্ষার দিনও শেষ হয়ে গেছে।
দেশব্যাপী খাগড়াছড়ির তেঁতুলের বাজার তৈরির হওয়ার সাথে সাথে পাহাড়ে তেঁতুল দিয়ে কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনাও ব্যাপক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আরও বেগবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাহাড়ে উৎপাদিত তেঁতুলের নির্দিষ্ট কোন জাত নেই জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে তেঁতুল গাছ। সময়ের ব্যবধানে তেঁতুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন পাহাড়ের লোকজন।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমএমএফ/জেআইএম