ভোলার চরাঞ্চলে চিচিঙ্গা চাষ করে বিপাকে চাষিরা
ভোলার চরাঞ্চলে শীতকালীন সবজি চিচিঙ্গা বা রেখা চাষ করে বিপাকে চাষিরা। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠছেন না তাদের। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করে এখন ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিতায় চাষিরা।
বাজারে চিচিঙ্গার দাম কম হওয়ায় অনেক চাষি ক্ষেতে সবজি রেখে না তুলে চলে গেছেন। কৃষকরা বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর ও দৌলতখান উপজেলার চর মদরপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বুকভরা আশা নিয়ে চিচিঙ্গা বা রেখা চাষ করেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে তেমন কোনো রোগ ও পোকা-মাকড়েরর আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
প্রতি বছর এই সময় পাইকারি বাজারের চিচিঙ্গা কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থাকলেও এ বছর একই সময় বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। এতে লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠছে না বলে দাবি কৃষকদের।
ভোলা সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার চিচিঙ্গা চাষি আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে মাঝের চরে চিচিঙ্গা চাষ করছি। প্রতি বছরই চিচিঙ্গা চাষ করে লাভবান হই। এ বছরও প্রায় এক একর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করেছি। ক্ষেতে কোনো পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পাচ্ছি না।’
দৌলতখান উপজেলার চর মদনপুর ইউনিয়নের চর মদনপুরের চাষি মো. বিল্লাল হোসেন জানান, গত বছর এ সময় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিচিঙ্গা বিক্রি করে ৩০-৩৫ টাকা পেতাম। কিন্তু এ বছর একই সময় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমাদের লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকারও উঠছে না।
একই এলাকার চাষি মো. আজাদ মিয়া জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাংক ও এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চিচিঙ্গার আবাদ করেছি। বাজারে চিচিঙ্গার দাম নেই। কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো কীভাবে।
তিনি আরো জানান, এ বছর সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও বাজারে চিচিঙ্গার মূল্যবৃদ্ধি না পেয়ে কমে গেছে। বাজারে যে দাম তাতে ক্ষেতের সবজি তুলতে শ্রমিকের মজুরিও হবে না। অনেক কৃষক ক্ষেতের ফসল না তুলে ক্ষেতে ফেলে রেখে চলে গেছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, এ বছর জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ হয়েছে। ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ বছর শীতকালীন সবজি ব্যাপক হওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না। এপ্রিল ও মে মাসের দিকে শীতকালীন সবজি চিচিঙ্গার মূল্যবৃদ্ধি পাবে। ফলে কৃষকরা আগের মতো লাভবান হতে পারবে বলে আমরা মনি করি।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/জেআইএম