জীবিকার মাধ্যম যখন সুন্দরবন
মামুনূর রহমান হৃদয়
বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের সুন্দরবন। বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম পরিবেশে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ এই বনভূমি।
১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবন সুন্দরী গাছের ম্যানগ্রোভের জঙ্গল নয়, এটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও স্বীকৃত। দুই বাংলার মানুষ এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের উপর নির্ভরশীলও বটে।
সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিরাট আয়ের উৎস। এ বনের আশপাশ ঘিরে ৪৫০টির মতো নদী, খাল যেখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, সাদা মাছ, কাঁকড়া আহরণ করে হাজার হাজার জেলে পরিবার জীবন-জীবিকা চালাচ্ছে।
এছাড়াও বনের হাজার হাজার মন শুকনা কাঠ, পাতা সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ। সুন্দরবনের গোল পাতা আরও একটি আয়ের উৎস। সুন্দরবন একদিকে যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক আয়ের উৎস অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব আয়েরও উৎস।
তাছাড়া সুন্দরবনের মধুর খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। প্রতিবছর এ বন থেকে ১৫ থেকে ১৬ হাজার মণ মধু আহরিত হয়। যা সারাদেশ থেকে আহরিত মধুর অর্ধেকেরও বেশি। এক তথ্য অনুযায়ি, প্রায় ১০ হাজার মানুষ মধু সংগ্রহের কাজে সুন্দরবনে নিয়োজিত থাকে। এ বন অসুস্থ মানষের জীবন বাঁচাচ্ছে তার বুকে ধারণ করা ৩৩৪ প্রজাতির বনজ বৃক্ষ, বিভিন্ন প্রজাতির গুল্ম, লতার মাধ্যমে সৃষ্টি ভেষজ ঔষধের মাধ্যমে।
বর্তমানে দেশ বিদেশে আধুনিক বিশ্বের মানুষের কাছে ভেষজ ঔষধ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর গ্রহণ যোগ্যতা ও চাহিদা বেড়েই চলছে। শরীরের জন্য বেশ উপযোগী মনে করছেন চিকিৎসকরা। সুন্দরবনের গহীন থেকে গহীনে জন্ম নেয়া লতা, পাতা, গুল্ম, বৃক্ষ থেকে মানুষের জীবন রক্ষাকারী মহামূল্যবান ভেষজ ঔষধ উদ্ভাবন সম্ভব। প্রয়োজন গবেষক এবং গবেষণাঘার।
চিরসবুজের এই সুন্দরবন সৌন্দর্য, রূপ মাধুর্যে যেন অনন্ত যৌবনা। এত সৌন্দর্য মণ্ডিত সুন্দরবন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ তথা বিনোদন পিপাসুদের অতীত থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সুন্দরবন সম্পর্কে জানতে, চিনতে এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি, বিদেশি পর্যটক আসছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে পর্যটক খাতসহ অন্যান্য খাত থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। সব মিলিয়ে সুন্দরবনের গুরুত্ব, প্রয়োজন, অবদান বলে শেষ করা অসম্ভব।
মানুষের বেঁচে থাকার এক অনন্য মৌলিক উপাদান অক্সিজেন যা ৬০১৭ বর্গ কি.মি. জায়গা জুড়ে সুবিস্তৃত বিশাল বনবৃক্ষ অক্সিজেন দিচ্ছে। এ দিক দিয়ে এ বনের গুরুত্ব অবদান অপরিসীম।
সুন্দরবন বাংলাদেশের রক্ষাকবচও বটে। ঝড়-ঝঞ্জা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন প্রতিনিয়ত প্রকৃতির বিরুদ্ধে নীরবে লড়াই করে যাচ্ছে।
পুরো পৃথিবীতেই আমাদের এই বনের সুখ্যাতি রয়েছে । প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ। বিশেষ করে আমাদের দেশের সকলের উচিত বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন আরও জোরদার ও কঠোর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনে সকলকে এর মূল্য বোঝানো যে এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে আমাদের জন্য কতটা অত্যাবশ্যক। তাহলেই নির্বিচারে বন উজাড় ও পশু-পাখি মরার হাত হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
লেখক: শিক্ষার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজে, ঢাকা।
এমএমএফ/এমএস