আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান কৃষকরা
চলতি মৌসুমে মাগুরা জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। মাচায় ঝুলছে লাউ, শিম, পটল, শসা ও করলা। কোথাও আবার বেগুন, কপি, লালশাকসহ নানা রকমের নতুন নতুন শীতের সবজি ক্ষেত।
এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে মাগুরা সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। চলতি মৌসুমে আগাম সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন অনেক কৃষক। এ বছর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে অনেকে আবার পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
চাহিদা মেটাতে অনেক গৃহিণী বসতভিটায় সবজি চাষ করছেন। বসতভিটার আশপাশে এসব সবজির চাষ করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়নি। বায়োচার ব্যবহারে স্বল্প খরচে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের সবজি।
পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেছেন তারা। লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে সবজি চাষ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শুধু সদর উপজেলায় পাঁচশ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুন ৮৫ হেক্টর, ফুলকপি ৯০, বাঁধাকপি ৬৫, মুলা ৪০, শিম ৫০, মিষ্টি কুমড়া ২০ ও ক্ষিরা ৩০ হেক্টরসহ অবশিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছে কৃষক। এ ছাড়া ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু ও ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তোড়া পেঁয়াজের।
কৃষক আলাল মিয়া বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২৫ কাঠা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছি। ব্যয় হয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ফুলকপিতে পচন রোগ ধরছে।’
বিভিন্ন কোম্পানির ওধুষ প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফুলকপি জমি থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ভালো দাম পাওয়ায় এ ফসল থেকে লাভের আশা করছেন তিনি। এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলুর চাষ করেছি।
কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে গাছ ভালো হয়নি। গাছের শক্তিও তুলনামূলক কম। এ ফসলে লোকসানের মুখ পড়তে পারেন বলে উল্লেখ করেন কৃষক দুলাল হোসেন। একই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম দুই বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। তার জমিতে কপির চারাগুলো সবে সতেজ হয়ে উঠছে।
কৃষক মেহারাম মোল্লা বলেন, ১০ কাঠা করে তোড়া পেঁয়াজের চাষ করেছেন। পেঁয়াজের গাছগুলো এর মধ্যে অনেক বড় হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব তোড়া পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। এসব গ্রামের মাঠে প্রচুর তোড়া পেঁয়াজের চাষ হলেও এবার অনেকটা কম হয়েছে।
অন্য কৃষকরা জানান, এবার তোড়া পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক চড়া। এক বিঘা জমিতে এ মৌসুমে রোপণের জন্য অন্তত ২৮ হাজার টাকার বীজ পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে। এত চড়া দামে বীজ কিনে লোকসানে পড়ার শঙ্কায় আবাদ কম হয়েছে। এ ছাড়া অসময়ে বৃষ্টিতে তৈরি জমি নষ্ট হয়ে যায়। পরে ওই সব জমিতে আবারও হালচাষ করতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের নতুন সবজি বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭০, বাঁধাকপি ৩০, মুলা ৩০, শিম ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, পালংশাক ৪০, গাঁজর ১০০ ও শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, পানি সাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমে যাবে। এতে রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্য। এ জন্য সবজি, গমসহ পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় মাগুরায় এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ চাষ সফল করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষকদের মধ্যে কৃষিঋণ প্রদান করেছে। ফলে দিন দিন এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে স্থানীয় চাষিরা।
মো. আরাফাত হোসেন/এমএমএফ/জেআইএম