মিষ্টি কুমড়া চাষ করে কোটিপতি আব্দুর রশিদ
হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করে দিনমজুর থেকে কোটিপতি হয়েছেন আব্দুর রশিদ। তার বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার রামবাড়ি গ্রামে। তার দেখাদেখি আশপাশের ২০ গ্রামের অনেক চাষি এগিয়ে এসেছেন। ফলে সবজি চাষের এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে সোমেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলের ওই এলাকায়। পাশাপাশি বহু বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছেন সফল এ চাষি। তিনি গত ১৫ বছর সবজি চাষ করে এলাকায় প্রায় ২শ’ কাঠা জমি কিনেছেন।
জানা যায়, আজ থেকে ১৫ বছর আগে জামালপুরের নান্দিনা থেকে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের রামবাড়িতে কাজ করতে আসেন আব্দুর রশিদ। তখন তার বয়স ২৫ বছর। কিছুদিন পর শ্রম বিক্রির ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুনের ফেরি ব্যবসা। ব্যবসার আয় থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকায় রামবাড়ির সোমেশ্বরী নদীর বালুচরে পাঁচ কাঠা জমি কেনেন। সে জমিতে ২০১০ সালে মাত্র ৪ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করেন। সে সময় তার আয় হয় ৩৫ হাজার টাকা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। সবজি চাষ করে এখন তিনি কোটিপতি।
মিষ্টি কুমড়া: ১০ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ ও ধনিয়া আবাদ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি কাঠায় গড়ে ৩শ’ করে মোট উৎপাদন হয় ৩৫ হাজার মিষ্টি কুমড়া। প্রতিটি কুমড়ার দাম গড়ে ৩০ টাকা হওয়ায় হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১৫-২০ টন। হেক্টরে উৎপাদন খরচ বাদে আয় থাকছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কাঠায় গড়ে সাড়ে ১২ মণ করে সাড়ে ১২শ’ মণ অর্থাৎ হেক্টরে ১৯ টন পেঁয়াজ ও ২০ মণ ধনিয়ার ফলন হয়েছে। এ বছর ২২ একর জমিতে আব্দুর রশিদ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, মরিচ ও গোল আলুসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। ফলন ও বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় ১০ একর জমির উৎপাদন খরচ বাদে ৬ লাখ ৯০ হাজার ১শ’ টাকা আয় করেন।
আরও পড়ুন > লাভের আশায় ‘কালো সোনা’য় ঝুঁকছেন চাষিরা
রসুন ও মরিচ : এই ২০ (২ একর) কাঠা জমিতে ফলন হয়েছে ১০ টন রসুন। প্রতি টন ১ হাজার ৮শ’ টাকা বাজারমূল্য হওয়ায় প্রতি হেক্টরে উৎপাদন খরচ বাদে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬শ’ টাকা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে একই পরিমাণ জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছে। কাঠাপ্রতি ১ মণ ১০ কেজি করে প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ কেজি মরিচ। উৎপাদন খরচ বাদে আয় হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
গোল আলু : আড়াই একর জমিতে প্রতি কাঠায় ১৫ মণ করে ৩৭৫ মণ গোল আলুর উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩ লাখ টাকা। ফসল তেমন ভালো না হলেও আলুর ফলন ভালো হয়েছে। এতে হেক্টরে ফলন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ টন গোল আলু। যার বাজারমূল্য ১ লাখ ১১ হাজার ৬শ’ টাকা।
গত কয়েক বছরে আব্দুর রশিদ সবজি চাষের আয় থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ১৭ একর জমি কিনেছেন। বন্ধক রেখেছেন ৬ লাখ টাকার ৬ একর জমি। সেই সাথে ২২ লাখ টাকায় দুটি বাসা-বাড়িও নির্মাণ করেছেন।
রামবাড়ি গ্রামের ইরাজ আলী মেম্বার বলেন, ‘আব্দুর রশিদ প্রথমে আমাদের এলাকায় শ্রমিকের কাম-কাজ করতে আসেন। কাম-কাজের মাত্র কয়েক হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ-রসুনসহ কাঁচামাল ফেরি করা শুরু করে। এখন সে ২শ’ কাঠা ফসলি জমি ও দুটি বাড়ির মালিক।’
আরও পড়ুন > কম খরচে লাভবান হতে ব্রাহমা গরুই ভরসা
রামবাড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘রশিদ চাচার সহায়-সম্পদ কিছুই ছিল না। তিনি ছিলেন হতদরিদ্র মানুষ। ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য স্পৃহা থাকলে কোন প্রতিবন্ধকতাই মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না।’
ঝানজায়াইল গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা, নিশার ভূঁইয়া, রামবাড়ি গ্রামের ইরাজ আলী মেম্বারসহ অনেক কৃষক জানান, সফল চাষি আব্দুর রশিদের দেখাদেখি এবং পরামর্শে এলাকাটি আজ শাক-সবজিরপল্লী। এখানে হাজার হাজার টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করার পেছনে আব্দুর রশিদের মতো সফল চাষিদের অনেক অবদান রয়েছে।’
কামাল হোসাইন/এসইউ/জেআইএম