ইলিশ থাকলেও পেটে ডিম নেই
ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতিহাট। এই একশ’ কিলোমিটারের মধ্যে ইলিশ উৎপাদন দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। ইলিশ বলতে মেঘনার ইলিশের প্রাধান্য আকাশচুম্বী। তাজা-টাটকা কিংবা রুপালি এ ইলিশ স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়।
চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সীমান্তের মেঘনা তীরের চর ভৈরবী ইলিশ ঘাট। এ ঘাটে ইলিশ আসে লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের মেঘনার মোহনা থেকে। দিন-রাত এখানে ইলিশের বেচাকেনা চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েকদিন মেঘনা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শিকার হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কী যেন আক্ষেপ জেলে, আড়ৎদার, ব্যবসায়ীদের।
আড়ৎদার সালাম হাওলাদার বলেন, ‘ভাই, নদীতে কোনো মাছ নেই। কী ব্যবসা করমু? দ্যাখেন, দুই-তিন দিন মাছ পাইছি। বেচাকেনাও হইছে ডেইলি দুই-তিন লাখ টিয়া। আর আজকে অন অ বিশ-ত্রিশ হাজার টিয়ার মাছও বেইছতো হারি ন।’
চাঁদপুরের হাইমচরের চর ভৈরবীর জেলে সোহেল গাজী, মনির হোসেন, ইছমাইল হোসেন, মফিজ উল্লাহ বলেন, ‘গাঙ্গে ইলিশ মাছ তেমন নাই। যা পাই, এগুলোর পেটেও তেমন ডিম নাই। হবে আস্তে আস্তে ডিম আসতাছে। গেছে বারের চেয়ে এবার আমরা মাইর খাইছি। এত খরচ পোষানো সম্ভব হবে না।’
> আরও পড়ুন- যেভাবে চাষ করবেন বাটা মাছ
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ সুরক্ষার জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে এ নিষেধাজ্ঞা পূর্ণিমার সময়কে কেন্দ্র করে হলেও এবার তা হয়েছে অমাবস্যাকে ঘিরে। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, ‘এক পূর্ণিমা গেছে। সামনে আমাবস্যা। এ আমাবস্যাকে ঘিরেই অভিযান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তো মাছের পেটে ডিম নাই। মাছ ডিম ছাড়বে সামনের পূর্ণিমার সময়। অভিযান এখন না দিলেও পারতো। একটু পেছালে আমরাও ক’টা ইলিশ পাইতাম। অন্তত আরো ১০-১৫ দিন পিছাইলে ভালো হতো।’
লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনার জেলে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সারা বছর গাঙ্গে যাই। কিন্তু ইলিশ পাই না। ইলিশ ক’টা পাইলেই অভিযান শুরু হয়। তাইলে আমরা কই যামু? ইলিশ মাছ ধরা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় আছে?’
কমলনগরের মতিরহাট ইলিশ ঘাটের আড়ৎদার ফারুক হোসেন বলেন, ‘এ অভিযানে ইলিশের ডিম ছাড়া কাভার হবে না। অভিযানের পরেও ইলিশের পেটে ডিম থাকবে। আরো দুই সপ্তাহ পর ইলিশের পেটে প্রচুর ডিম থাকবে। এ সময় থেকে অভিযান শুরু হলে কী ক্ষতি হতো?’
> আরও পড়ুন- চিতল মাছ চাষ করবেন যেভাবে
এখন ইলিশের পেটে ডিমের পরিমাণ খুবই কম। ভরা মৌসুমের ২২দিন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকলে জেলেসহ ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে মনে করেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমের মূল সময় ৭ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর। এখন ইলিশের পেটে যে ডিম রয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে তা পরিপক্কতা পাবে। এ সময়ের মধ্যেই মোহনায় এসে নিরাপদে ডিম ছাড়বে। তাই দেশের ৬টি অভয়াশ্রমসহ ইলিশ বিচরণের ক্ষেত্রগুলোতে এ সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’
এসইউ/এমএস