পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে দেবে ‘রেডলেডি’ পেঁপে
পোল্ট্রি ফার্ম ও ফলদ বাগানে সফল মো. আব্দুল খালেক ‘রেডলেডি’ পেঁপে চাষেও সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। ৪ বছর আগে মাটিরাঙ্গার রসুলপুর গ্রামে ২০ একর জমিতে ‘এসবি ফার্ম’ নামে একটি কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পোল্ট্রি ফার্ম দিয়ে শুরু করা ‘এসবি ফার্ম’ ইতোমধ্যে কৃষিবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২ বছর আগে নিজের অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলা ভূমিতে পাঁচশ’ চারা রোপণের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেডলেডি’ পেঁপে চাষ শুরু করেন আব্দুল খালেক। পরে ব্র্যাক ও ঢাকা বীজঘর থেকে সংগৃহীত বীজ থেকে উৎপাদিত আরো ২ হাজার রেডলেডি জাতের পেঁপের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে ২ হাজারেরও বেশি গাছ থেকে ফল পাওয়া যাচ্ছে। যা থেকে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
মো. আব্দুল খালেক মনে করেন, সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে। ইতোমধ্যে তাকে অনুসরণ করে সারোয়ার আলম ও মো. নাছির উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক পাহাড়ি টিলায় রেডলেডি পেঁপে চাষ শুরু করেছেন।
> আরও পড়ুন- ২ লাখ টাকায়ও বনসাই বিক্রি করেননি সেলিনা
‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক- এমনটি জানিয়ে মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘পাহাড়ে পেঁপে বিপণন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হওয়া উচিত। বিশেষ করে সমতল অঞ্চলে বাজারজাত করা গেলে স্থানীয় কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে এ জাতের পেঁপে চাষ বাড়ানো হবে।’
এসবি ফার্ম ঘুরে দেখা গেছে, পোল্ট্রি ফার্মের পাশেই অব্যবহৃত পাহাড়ি টিলায় সবুজে মোড়ানো ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বাগান। সারি সারি পেঁপে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারের পেঁপে। সেখানেই কথা হয় ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাশেদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বাগানে পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পূর্ণ জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে। নিয়মিত চারজন শ্রমিকসহ বাগানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে গড়ে দশজন শ্রমিক কাজ করে।
জানা যায়, তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির এ পেঁপে চারা রোপণের ৫-৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং ৭-৯ মাসের মধ্যে প্রথম ফল পাওয়া যায়। লাল-সবুজ রঙের প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় দেড়-দুই কেজি। খেতে সুমিষ্ট এ পেঁপে সুগন্ধিযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয় প্রক্রিয়াতেই বাজারজাত করা যায়। পাকা পেঁপে খুব সহজে নষ্ট হয় না বলে বাজারজাত করা সহজ। এ জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে গাছের আয়ুষ্কাল ২ বছরের বেশি।
> আরও পড়ুন- বদলে যাচ্ছে গাইবান্ধার ১৬৫ চরের মানুষের জীবন
পাহাড়ের ঢালুতে চাষাবাদ সহনীয় জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ের মাটির উর্বরতা ও অনুকূল আবহাওয়া রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষের জন্য সহায়ক। শুধু ছত্রাকের আক্রমণ ছাড়া অন্য কোন রোগ হয় না।’
পাহাড়ের ঢালু অংশে এ জাতের পেঁপে সম্ভাবনাময় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত বাগান সৃষ্টিসহ সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এ জাতের পেঁপে পাহাড়ে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।’
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/পিআর