চিতল মাছ চাষ করবেন যেভাবে
আমাদের দেশে এখনো চিতল মাছের একক চাষ শুরু হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে মিশ্রভাবে চিতল মাছের চাষ শুরু হয়েছে। পুকুরের একটি চিতল মাছ বছরে দেড়-দুই কেজি ওজনের হয়ে থাকে। তাই আসুন জেনে নেই চিতল মাছ চাষের পদ্ধতি-
পোনা উৎপাদন: পুকুর ভালোভাবে শুকিয়ে ১৫ দিন রাখবেন। এ সময়ে পুকুরের তলায় এক ধরনের ঘাস হবে। তখন পুকুরে পানি দিবেন। ঘাসগুলো বড় হয়ে পানির উপর চলে আসবে। এভাবে পুকুর প্রাকৃতিকভাবে চিতল চাষের উপযোগী হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে পুকুরে মা মাছ এবং পুরুষ ব্রুড মাছ মজুদ করবেন। মজুদের ঘনত্ব হবে প্রতি শতাংশে সর্বোচ্চ ৩-৪টি।
খাবার: ব্রুড মাছ মজুদের পর খাবার হিসেবে কার্প বা রুই জাতীয় মাছের ধানি পোনা পুকুরে ছেড়ে দিবেন। এছাড়াও তেলাপিয়ার পোনা দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পানি দেওয়ার পর কিছুসংখ্যক ব্রুড তেলাপিয়া পুকুরে ছেড়ে দিবেন।
> আরও পড়ুন- ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ- শেষ পর্ব
ডিম সংগ্রহ: চিতল মাছ সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অমাবস্যা বা পূর্ণিমার রাতে ডিম দিয়ে থাকে। তাই এ সময়ে পুকুরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এতে চিতল মাছের ডিম পাড়া তরান্বিত হবে। ডিম সংগ্রহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কাঠের ফ্রেম বানাবেন। কাঠের ফ্রেম বা ফ্রেম হিসেবে ব্যবহৃত ছোট নৌকা পুকুরে ডুবিয়ে রাখবেন। এপ্রিলের আগেই এটি সম্পন্ন করে রাখবেন। মে মাস থেকে চিতল ডিম পারতে শুরু করে। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার ২-৩ দিন পর কাঠ দিয়ে বানানো ফ্রেমটিকে তুলে দেখতে হবে ডিম দিয়েছে কিনা। ফ্রেমে যদি ডিম দেখা যায়, তাহলে ডিমসহ ফ্রেমটিকে নার্সারি পুকুরে স্থানান্তরিত করবেন।
নার্সারি পুকুর: ৫ শতাংশের পুকুর নার্সারির জন্য নির্বাচন করা সাধারণত ভালো। পুকুর শুকিয়ে পুকুরের তলা চাষ দিয়ে নিবেন। তারপর পরিষ্কার পানি দিবেন। পানির উচ্চতা ২-৩ ফুট। পানি দেওয়া হলে ডিমসহ কাঠের ফ্রেমটি নার্সারি পুকুরে সর্তকতার সঙ্গে দ্রুত ডুবিয়ে রাখবেন। ডিম ফুটতে প্রায় ১৫ দিন লাগে। পানি পরিষ্কার না হলে ডিমে ফাঙ্গাস পড়তে পারে। নার্সারিতে নেওয়ার পর তাপমাত্রাভেদে ১২-১৫ দিনের মধ্যেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।
> আরও পড়ুন- পুকুরে পাঙ্গাসের সমন্বিত চাষ
খাবার: বাচ্চা হওয়ার পর খাবার হিসেবে কার্প জাতীয় মাছের রেনু পুকুরে ছাড়তে হবে। যা ১-২ ইঞ্চি সাইজের হয়। এভাবে নার্সারি পুকুরে সপ্তাহ দুয়েক রাখার পর প্রায় ৩ ইঞ্চি সাইজের হয়। তারপর চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে।
রোগ: এদের মুখের দিকে কাঁটা বা বুকের নিচের কাঁটা দিয়ে একে অপরকে আক্রান্ত করতে পারে। সেই ক্ষত থেকে মুক্তি পেতে প্রত্যেকবার ডিম দেওয়ার পর পুকুরে পটাসিয়াম পার-মেঙ্গানেট ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে প্রজননের পর আক্রান্ত মাছগুলো দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে।
এসইউ/এমএস