পহেলা বৈশাখেই ইলিশের স্যুপ ও নুডলস : নওশাদ আলম
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। স্বাদে অতুলনীয় এই মাছ থেকে এবার আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন কিছু। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষক আবিষ্কার করেন ইলিশের স্যুপ ও নুডলস। আশা করা যায়, শিগগিরই সবার হাতের নাগালে চলে আসবে মাছের রাজা ইলিশ। এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাকৃবি প্রতিনিধি মো. শাহীন সরদার-
জাগো নিউজ : ইলিশের স্যুপ ও নুডলস তৈরির চিন্তা কিভাবে এলো?
নওশাদ আলম : ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ইলিশের ব্যাপক উৎপাদনের পর মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশ রফতানির চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। এছাড়া ইকোফিস কাটাহীনভাবে বাঙালি জনগোষ্ঠীর বাইরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইলিশের বাণিজ্যিক ব্যবহার কিভাবে করা যায়, সে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। এর পরই আমার সঙ্গে কাজ শুরু করেন তারা। ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টারের ‘ইকোফিশ প্রকল্প’ ইলিশ পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ গবেষণার অার্থিক সহায়তায় এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
জাগো নিউজ : এ গবেষণায় সফল হতে কতদিন লেগেছে?
নওশাদ আলম : দীর্ঘ দেড় বছরের গবেষণায় এ সাফল্য অর্জিত হয়।
জাগো নিউজ : ইলিশের স্যুপ ও নুডলসের উপকারি দিক কী কী?
নওশাদ আলম : ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বিযুক্ত মাছ। ইলিশের চর্বি ওমেগা-৩ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমিয়ে উপকারী কোলেস্টরেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। আর তাই শরীর সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখে।
জাগো নিউজ : একই স্বাদ পাওয়া যাবে কি?
নওশাদ আলম : হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ অপরিবর্তিত রেখে স্যুপ ও নুডলস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এতে ইলিশের আমিষ, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, অন্যান্য পুষ্টিগুণ একই থাকে।
জাগো নিউজ : ইলিশের স্যুপ ও নুডলসের সুবিধাজনক দিক কী?
নওশাদ আলম : সুস্বাদু ও বিদেশিদের কাছে লোভনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও ইলিশের মাংসল অংশে অসংখ্য ছোট ছোট কাটা থাকায় তারা খেতে পারেন না। অপরদিকে লোনা ইলিশ ব্যতিত ইলিশকে সারা বছর সংরক্ষণের আর কোনো পদ্ধতি চালু নেই। অথচ এটি সহজেই সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে।
জাগো নিউজ : অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিনা?
নওশাদ আলম : এক কেজি ইলিশ মাছ থেকে প্রায় ২৫০টি ব্লক তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি ব্লকের ওজন ১২ গ্রাম। ফলে এক কেজি টাটকা ইলিশের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হবে তৈরি পণ্য। এছাড়া নতুন পণ্য তৈরি হবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, বাজারে সৃষ্টি হবে চাহিদা।
জাগো নিউজ : কতটুকু মাছ থেকে কতটুকু স্যুপ ও নুডলস পাওয়া যাবে?
নওশাদ আলম : প্রতিটি ব্লক থেকে একজন মানুষের খাওয়ার উপযোগী ৭০ গ্রাম নুডলস অথবা ১৬০ মিলিলিটার স্যুপ তৈরি করা সম্ভব।
জাগো নিউজ : মাছের কোন কোন অংশ ব্যবহার করা যাবে?
নওশাদ আলম : মাছের মাংসল অংশ, কিমা, মাথা, নাড়ি-ভুড়ি, ডিম অর্থাৎ সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য।
জাগো নিউজ : দাম কেমন পড়বে?
নওশাদ আলম : স্যুপ ও নুডলস দুই ক্ষেত্রেই পণ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে হবে। অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে হবে দাম।
জাগো নিউজ : কতদিন সংরক্ষণ করা যাবে?
নওশাদ আলম : ইলিশের দাম খুব বেশি বলে বর্ষাকাল ছাড়া মানুষ বছরের অন্যান্য সময় এটা তেমন খেতে পারে না। ইলিশ পণ্য ঘরের তাপমাত্রায় (২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা ফ্রিজে (-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করাও কষ্টসাধ্য। ইলিশের স্যুপ ও নুডলস পুষ্টিমান ঠিক রেখে সংরক্ষণ তাপমাত্রায় বছরব্যাপী সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে।
জাগো নিউজ : কবে এবং কিভাবে বাজারে আসছে?
নওশাদ আলম : ইলিশের এ দুটি পণ্য ভারগো ফিশ অ্যান্ড এগ্রো প্রসেস লিমিটেডের সহায়তায় বাজারজাত করা হবে। পহেলা বৈশাখেই বাজারে পাওয়া যাবে।
জাগো নিউজ : এর ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
নওশাদ আলম : বিদেশে রফতানি করে ইলিশের পরিচিতি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। দেশের বাজারেও ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
মো. শাহীন সরদার/এসইউ/জেআইএম