ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

আলুর অর্ধেক দামে হতাশ চাষিরা

জেলা প্রতিনিধি | মুন্সীগঞ্জ | প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সবসময়ই শীর্ষে। আলু উৎপাদনে বাম্পার ফলেনেরও রেকর্ড গড়েছে বহুবার। এই রেকর্ড পরিমাণ ফলন কয়েক বছর যাবৎ গলার ফাঁস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যা চলতি বছর চরম আকার ধারন করেছে। আলুর বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে উৎপাদনসহ সংরক্ষণ খরচ বেশি হওয়ায় রীতিমত হতাশায় ভুগছে চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা। আবার লগ্নি আর ভাড়ার টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

জেলার ৩৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চলতি (২০১৬-২০১৭) অর্থবছরে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। যা আগের চেয়ে বেশি। এরমধ্যে অধিকাংশ আলু স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়ছে। আর কিছু উত্তোলনের সময় বিক্রি করে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন আলু ৭৪টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু বিক্রির সময় অতিবাহিত হলেও মজুদকৃত প্রায় ৪ লাখ টন আলু অবিক্রিত রয়ে গেছে। এতে লোকসান গুনতে হতে পারে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা।

munshiganj-in-(3)

আলুর বর্তমান বাজারমূল্য এতটাই নিম্নমুখী যে, বর্তমান মূল্যে আলু বিক্রি করলে লাভের চেয়ে লোকসানের মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি। এমতাবস্থায় আলু বিক্রিতে অনীহা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। উৎপাদনসহ সংরক্ষণ খরচ মিলে প্রতিবস্তা আলুর মূল্য পড়েছে ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। তবে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকায়। যাতে বস্তাপ্রতি হিমাগার খরচ পরিশোধ করার পর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না মজুদকারীদের। এর ওপর হিমাগারগুলোতে সময় অতিরিক্ত আলু সংরক্ষিত থাকায় বস্তাপ্রতি ৮-১০ কেজি আলু নষ্ট হচ্ছে। এ লোকসান যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’।

নয়াগাঁও বাসিন্দা আলু ব্যবসায়ী মো. জামাল মেম্বার জানান, বাছাইকৃত আলু হিমাগার থেকে প্রতিকেজি ৭-৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। যা খুচরা বাজারগুলোতে ১৫-১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বস্তাপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা দরে। তবে বস্তাপ্রতি হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করার পর ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। কিন্তু এ পরিমাণ অর্থের দ্বিগুণ অর্থ খরচ হয়েছে আলু উৎপাদনে।

munshiganj-in-(3)

পঞ্চসার ইউনিয়নের কদম রসূল হিমাগার ম্যানেজার দুলাল মণ্ডল জানান, এবছর ২৫ শতাংশ আলু বেশি সংরক্ষিত হয়েছে। বন্যার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় রফতানিকৃত অঞ্চলগুলোতে সময়মতো আলু রফতানি সম্ভব হয়নি। মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো ৬০ শতাংশের মতো রয়ে গেছে। যা সময়মতো বিক্রি না হলে অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যাবে।

আলু চাষি মো. দিলদার হোসেন আক্ষেপ করে জানান, অল্প সময়ের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু খালাস করতে না পারলে ভাড়ার পরিবর্তে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে মজুদ আলু হস্তান্তর করে শতভাগ লোকসান মেনে নিতে হবে।

munshiganj-in-(3)

বাংলাদেশ হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি জানান, বর্তমানে আলুর দাম এতটাই কম যে, কৃষকরা উৎপাদন খরচ উঠাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হিমাগার ব্যবসায়ীরা চরম হতাশাগ্রস্ত। এমতাবস্থায় কৃষক যদি আলু না নেয় তবে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে হিমাগার ব্যবসায়ীদের। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আলু রফতানির বিষয়টি আরো বেগবান করা উচিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, ন্যায্য মূল্যের চেয়েও মুন্সীগঞ্জে অনেক কম মূল্যে আলু বিক্রি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এ বছর লোকসানের মুখে পড়েছে। যারা আলু উত্তোলনের পর বিক্রি করেছেন তারা কিছুটা লাভবান হয়েছেন। তবে অধিকাংশ আলু এখনো বিভিন্নভাবে মজুদ রয়েছে। আলুর বাজারের এই পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী, কৃষক এবং হিমাগার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।

ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন