দক্ষিণাঞ্চলের বড় সুপারির হাট
সুপারির জন্য দক্ষিণাঞ্চলের সবেচেয় বড় বাজার পিরোজপুরে। জেলায় ব্যাপক হারে সুপারি চাষ করা হচ্ছে এবং বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে দামও। তবে লবণাক্ততা এবং অন্যান্য পরিবেশ বিপযর্য়ের কারণে সুপারি দিন দিন কমছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি করায় দেশীয় সুপারির দাম কমে যাচ্ছে। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছে অনেক কৃষক। অপরদিকে ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর বাজারে কোন ইজারা নেই। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝেও ক্ষোভ রয়েছে।
কৃষক ও সুপারি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশে সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পিরোজপুর সুপরিচিত। একসময় দেশে উৎপাদিত সুপারির বড় অংশ দক্ষিণাঞ্চলের সদর উপজেলার চলিশা বাজারে অর্ধকোটি টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হতো এবং কাউখালী ও ইন্দুরকানী এলাকায় বর্তমানে ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ১২টি উপজেলার ব্যবসায়ীরা সুপারি নিয়ে বিক্রির জন্য কাউখালী শহর, চলিশা বাজার ও ইন্দুরকানীতে বসেন।
বিভিন্ন বাজারে ঘুরে জানা গেছে, ১০-১২টি ছোট-বড় হাটে সুপারি বেচাকেনা হয়। এসব হাটে সারা বছরই সুপারি বেচাকেনা চলে। তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এবং পাকা সুপারির পিক মৌসুম শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। এসময় বেশির ভাগ সুপারি বেচাকেনা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে।
আরও পড়ুন- ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন
পিরোজপুরে ৪ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারত, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ২১ ঘার (২১০টি) এক কুড়ি কাঁচাসুপারির দাম শ্রেণিভেদে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। তাছাড়া শুকনো সুপারি ১ মণ ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সুপারি ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানান, শুকনো সুপারি সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে বিক্রি শুরু হয়ে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে এবং শ্রাবণ মাস থেকে কাঁচা সুপারি অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে। এসময়ে কৃষকদের হাতে কোন টাকা-পয়সা থাকে না। তাছাড়া এসময় কৃষকরা বোরো, গমসহ রবিশস্য চাষে ব্যস্ত থাকেন। গাছের সুপারি বিক্রি করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কৃষি কাজে লাগাতে পারে।
সুপারিচাষি সেলিম মিয়া, আলী হোসেন, সালাউদ্দিন, জসিম হাওলাদার, মীর নাসিরসহ অনেকে বিদেশ থেকে সুপারি আমদানি বন্ধ করে দেশের সুপারিচাষিদের বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চন্ডিপুর বাজারে গিয়ে জানা যায়, প্রত্যেক বাজারের দিন ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যবসায়ী সুপারি কিনে থাকেন। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। আর প্রতিহাটে প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ বস্তা সুপারি বেচাকেনা হয়। এটি এ উপজেলার সবচেয়ে বড় সুপারির হাট।
আরও পড়ুন- ভাসমান সবজি চাষ জনপ্রিয় করতে বড় উদ্যোগ
বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী মনির হোসেনসহ অনেকে জানান, মন্ত্রী কয়েক বছর আগে বাজারের ইজারা মওকুফ করে দিলেও স্থানীয় কিছু লোক বস্তাপ্রতি ২০ টাকা করে খাজনা আদায় করেন। এবিষয়ে বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতী জানান, উপজেলার কোন হাট-বাজারেই খাজনা নেওয়া হচ্ছে না। তবে চণ্ডীপুর সুপারির হাটে স্থানীয় কয়েকজন জোর করে টাকা আদায় করছে বলে মৌখিক অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বালিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা কামাল জানান, কলারণ চণ্ডীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে। তাই যুবলীগ নেতা রনিকে সুপারি বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, উপজেলার কোন হাট-বাজারে ইজারা নেই। যদি কেউ ইজারা তুলে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
হাসান মামুন/এসইউ/এমএস