বিদেশি ইঁদুর পালনে সফল উদ্যোক্তা লাবনী

খাঁচার মধ্যে কিলবিল করছে অসংখ্য ইঁদুর। দেখলে মনে হবে, এ যেন ইঁদুরের সাম্রাজ্য। প্রশিক্ষণ ছাড়াই গুগল আর ইউটিউব দেখে সুইজারল্যান্ডের জনপ্রিয় ইঁদুরের জাত সুইস অ্যালবিনো পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন লাবনী আক্তার। এই গৃহবধূর শুরুটা চারটি ইঁদুর নিয়ে শখের বশে হলেও এখন তার খামারে প্রায় ৪০০টি ইঁদুর। প্রতি মাসে ইঁদুর বিক্রি করে আয় করছেন অন্তত ২০ হাজার টাকা। বেকারত্ব দূর করতে ইঁদুর পালনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর পৌর এলাকার তুলাশার এলাকার বাসিন্দা লাবনী আক্তার। পড়াশোনা শেষ করেছেন ঢাকার খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায়। ২০১৬ সালে বিয়ের পর পুরোপুরি সংসার ও সন্তানদের দেখাশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মনের মধ্যে সব সময়ই ছিল স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
একবছর আগে স্বামী রাকিবুল ইসলাম ঢাকার কাঁটাবন থেকে চারটি ইঁদুর কিনে উপহার দেন। এ থেকেই তার খামারের যাত্রা শুরু। শুরুটা একটু ঝামেলার হলেও পরে গুগল আর ইউটিউব দেখে হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর ইঁদুর পালনকারী। সব সময় অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়ে সাহায্য করে গেছেন স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে ৪০টি প্যারেন্টস ইঁদুর প্রতি মাসে প্রায় ২০০টি বাচ্চা দেয়। যা তিনি গবেষণাগার এবং অন্যান্য খামারে বিক্রি করেন। এ থেকে খরচ বাদ দিয়ে মাসে অন্তত ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তার ইঁদুর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় সৌখিন খামার এবং চিড়িয়াখানায় বিক্রি হয়।
বিজ্ঞাপন
লাবনী আক্তার বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে ভেবেছিলাম চাকরি করবো। সংসার আর বাচ্চা সামলে চাকরি করা অনেক কষ্টসাধ্য। সব সময় চাইতাম স্বাবলম্বী হতে। পরে স্বামীর অনুপ্রেরণায় ইঁদুর পালন শুরু করি। আস্তে আস্তে অনেক ইঁদুর হয়। এখন ইঁদুর বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছি। ভবিষ্যতে খামারটি আরও বড় করতে চাই। এতে বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’
লাবনী আক্তারের শাশুড়ি নাছিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে যখন ঢাকা থেকে প্রথম ইঁদুর নিয়ে আসে; তখন ভেবেছিলাম এগুলো আবার পালন করা যায় নাকি। এখন দেখি এই ইঁদুর পালন করেও টাকা আয় করা যায়। আমি সব সময় ছেলের বউয়ের পাশে থেকে সাহায্য করে যাচ্ছি।’
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় জাহিদ হাসান রনি বলেন, ‘একজন নারী প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইউটিউব দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তার স্বামী এবং শাশুড়ি সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে তিনি ইঁদুর পালন করে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। যা সমাজের জন্য আইকন হতে পারে। প্রশাসন যেন তাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে খামারটি বড় করার ব্যবস্থা করে দেয়।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, ‘লাবনীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনন্য। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নারী উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। লাবনী যদি আসেন, তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।’
এসইউ/এএসএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন