ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৫

‘পানির অপর নাম জীবন’—কথাটি শুধু একটি বাক্য নয়, এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। আমাদের শরীর থেকে শুরু করে প্রকৃতি, কৃষি, শিল্প—সবকিছুর মূলেই আছে পানি। অথচ দিন দিন বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। সেই সংকট মোকাবিলার গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতেই প্রতি বছর ২২ মার্চ পালিত হয় ‘বিশ্ব পানি দিবস’।

বিশ্ব পানি দিবসের যাত্রা
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বিশ্ব পানি দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিনটি। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্যের আলোকে বিশ্বজুড়ে পানি সংরক্ষণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হিমবাহ সংরক্ষণ’, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও নিরাপদ পানির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। এ প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আরও দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্বজুড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট
বিশ্বের প্রায় ২২০ কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬% মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাচ্ছে না। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই সুপেয় পানির তীব্র অভাব। শহরগুলোতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, শিল্প-কারখানা ও দূষিত বর্জ্যের কারণে স্বাভাবিক জলাধার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নও এ সংকটকে আরও প্রকট করে তুলছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন

বাংলাদেশের পানি সংকট: সমস্যা কোথায়?
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও সুপেয় পানির সংকট ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সংকটের কয়েকটি কারণ হলো:

বিজ্ঞাপন

আর্সেনিক দূষণ: বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ প্রকট। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু অনেক এলাকায় তা ৫০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি।

নদীদূষণ: শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যার কারণে দেশের প্রধান নদীগুলো মারাত্মক দূষিত। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও বালু নদীর পানি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

নগর এলাকায় পানির সংকট: রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২৪০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয় ঢাকাবাসীর, কিন্তু অনেক সময় তা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

বিজ্ঞাপন

খরার প্রভাব: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় খরার কারণে পানির অভাব তীব্র হচ্ছে।

নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমাদের করণীয়
পানি সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ পর্যন্ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে করণীয়
১. অপ্রয়োজনে পানি অপচয় বন্ধ করতে হবে।
২. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
৩. ব্যবহৃত পানিকে পুনরায় পরিশোধন করে পুনর্ব্যবহার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন

সরকারি উদ্যোগ
১. নদীদূষণ রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
২. টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৩. গ্রামীণ অঞ্চলে নিরাপদ পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে আরও গভীর নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন।

সামাজিক সচেতনতা
পানির অপচয় রোধে সামাজিক সচেতনতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। পানির অপচয় রোধে আমাদের গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম শেখানো জরুরি।

বিজ্ঞাপন

মনে রাখতে হবে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নিরাপদ পানির চাহিদা বাড়ছে কিন্তু সরবরাহ কমছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব হলো পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় যত্নবান হওয়া। ‘এক ফোঁটা পানি, এক ফোঁটা জীবন’—সত্যটি মনে রেখে আমাদের সবাইকে পানির গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে দায়িত্ব নিতে হবে।

বিশ্ব পানি দিবসে আমরা শপথ নিই—নিরাপদ পানি সংরক্ষণে দায়িত্বশীল হবো, পানির অপচয় রোধ করবো এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলবো।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন