শায়রী ব্যানার্জীর তিনটি কবিতা
দান এখনো তোমার হাতে
সতেরোর কিশোরীর মতো এবার
স্বপ্নগুলো আর কাগজে লিখে
ফুল চন্দন মুড়িয়ে তোমার পায়ে দেবো না!
জানি শুধু পূরণ নয় একের অধিক হয়ে যাবে।
তোষকে যেদিন থেকে পোড়া দাগ- কয়েল জ্বালাই না।
অথচ অধিকের প্রত্যাশা ছিল না তো!
একেই তো পূর্ণ। ভরা পাতে,
একের অধিক তবু মধ্যিখান দেখি কেন শূন্য!
বেশ বড় হয়ে গেছি এখন গ্যাস লাইটার হাতে,
‘কালোহুমকি’- আমিও পারি ভাগ্য লিখতে কাগজ,
কলম, ফুল-চন্দন না হয় দহন নয় মীরাক্কেল!
প্রেমিকা হবো, চোখ খোলো,
আজও দানটা তোমারই হাতে।
এমন একটি কবিতা লেখো
একটা কবিতা লেখো, ভালোবাসার কবিতা!
প্রেমিকার নাম হবে ঘুম।
কবিতায় নানা রঙের লজ্জা থাকবে,
পাওয়ার সংগ্রাম থাকবে,
ছেঁড়া অনুভবগুলোকে জুড়িয়ে দেওয়া যাবে।
যে কবিতায় জন্ম থাকবে মৃত্যু নয়,
সুখের রঙ থাকবে, ভালোবাসা থাকবে অফুরন্ত,
কিন্তু প্রকাশটা আলিঙ্গনে।
যে কবিতায় ভোরের পর্দা সরিয়ে
প্রথম মুখটা প্রেমিকের রাতের আলো নেভাতে গিয়ে
শেষ মুখটা প্রেমিকের মাঝে আলোকবর্ষ দূরত্ব।
কবিতা হবে প্রেমিকের বুক যেখানে
থরে থরে যন্ত্রণা সাজানো থাকবে,
প্রেমিকের হাতের স্পর্শেই মিলিয়ে যাবে।
যে কবিতা আঙুল ধরে চলে,
আঙুল আলগা হলেই হাতটাকে শক্ত করে ধরে।
যে কবিতায় আগুন থাকবে অনবরত,
পোড়াবে- পাগলামির হিসেব থাকবে না।
প্রেমের এই মিলন বলবে যেন ‘তুই’ তার নিয়তি,
যে কবিতার গভীরে প্রেম তোমার কুর্ণিশ থাকবে।
যে কবিতা সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে না
যে কবিতা কোনো কবির কবিতা নয়
এক প্রেমিকের চোখ দিয়ে আঁকা কবিতা
যে কবিতা জিতিয়ে নিয়ে যাবে বাকি পথটুকু
যে কবিতা প্রতি ভোরে জন্ম দেবে অসংখ্য শিউলির
যে কবিতায় প্রেম আত্মাকে স্পর্শ করে যাবে।
প্রিয় এমন একটি কবিতা লেখো।
চুপের খাতায় লিখি
শঙ্কাহীন বিবর্ণ সন্ধ্যায় ঝাঁপ দিয়েছি আগুনে,
পিছলে গেছি আজ নিষেধের জালে,
গুছিয়েছি পাতায় পাতায়,
ঘরে ফিরে যাওয়া পাখিদের কলতানে।
নেমে আসে চোখ বেয়ে নিবিড় স্তব্ধতা,
‘ভালোবাসি’ ভালোবাসার অপরাধে
অভিযোগ না হয় ভালোবাসা তুচ্ছ,
না হয় প্রেমে বন্য হলাম।
সাফল্যের আলো-ছায়ায় বুঝেছি তো
প্রতিবার বৃষ্টি তো কেবল ক’দিনের জন্য
অবসরের বার্তা লিখি, পরিত্যক্ত ফুরায় সময়,
অশান্ত মন তবু তোমার জয়ে হাসতে বাধ্য হয়।
সব রঙ মুছে যায়, রিক্ত পথ,
মন উদাস ‘ভালোবাসি’ আজ চুপের খাতায়,
পরিত্যাজ্য সব ইতিহাস।
এসইউ/এমএস